একদিকে উত্তরবঙ্গে রাহুলের নায়্য যাত্রা, অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতায় টি এম সি ” এর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ” বিরুদ্ধে পদযাত্রা, এক কথায় , লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই নানা শিবিরের নানা কর্মসূচিতে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপের ছোঁয়াচ।
এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও রাহুলের যাত্রা সঙ্গী জয়রাম রমেশের মুখে ” মমতা স্তুতির” অভিযোগে জোর গলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদেশ নেতা কৌস্তভ বাগচী। বলতে গেলে, আগামী কয়েকটি দিন রাজ্য রাজনীতিতে পাখির চোখ যে উত্তর বঙ্গ, তার ইঙ্গিত মিলেছে আগামী সপ্তাহে খোদ মুখ্য মন্ত্রীর দিন পাঁচেকার বাংলার উত্তর প্রান্তে সফরের গুরুত্ব পূর্ণ কর্মসূচি থেকেই। তার বি জে পি ‘ র রাজ্য সভাপতির নির্বাচনী সভা করার কথা আছে বলেই রাজনৈতিক সূত্রে খবর।
এদিন জলপাইগুড়িতে পি ডব্লিউ ডি মোড় থেকে কদমতলা চক পর্যন্ত রাহুলের ন্যায় যাত্রা ঘিরে ভালোই ভিড় হয়েছিল। এর পর রাহুল বাসে করে শিলিগুড়িতে যান।।ন্যায় যাত্রায় অধীর চৌধুরীকে পাশে নিয়ে রাহুল এমন কথাও বলেন, ,” বাংলার মানুষের কাছে যে ভালোবাসা পেলাম, তাতে আমি আপ্লুত। ” বাংলার মানুষের অসীম বুদ্ধি মত্তা তথা ‘ইন্টেলেকটের ‘ উপর তার গভীর আস্থা আছে বলেও তিনি জানেন। তিনি মনে, দেশ ও সমাজের নানা স্তরে বিভেদ ও বিদ্বেষ এর বাতাবরণ তৈরি হোক এটা আম জনতা কখনোই চায় না। “বেরোজগারির” রমরমার জন্য বি জে পি সরকারকে বার বার নিশানা করছেন সনিয়া পুত্র। এদিনও তিনি বলেন, ” যুবারা চাকরি চাইছে। দেশের গরীব প্রান্তিক মানুষ উন্নয়ন চায়। “
যদিও ন্যায় যাত্রা ঘিরে খানিক বেসুরো গেয়েছেন কৌস্তভ। উপলক্ষ্য জয়রামের একটি মন্তব্য। ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে প্রবল ডামাডোলের মধ্যেই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এদিন জলপাইগুড়িতে কার্যত মমতার গুন গেয়েছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এদিন জয়রাম জানান, টি এম সি ও কংগ্রেসে দুই দলের মধ্যেই লোক তন্ত্র আছে। তাই তো দুই দলের মধ্যে মতের আদান প্রদান হয়। তার মতে, ” কংগ্রেস ও মমতা দুয়েরই লক্ষ্য বি জে পি ও আর এস এস কে ঠেকানো। আর মমতার তরফে এটা যে শুধু নির্বাচনকে পাখির চোখ করে, তা নয়। বি জে পি’ র বিরোধিতা তাঁর বিচার ধারার মধ্যেই রয়েছে। ” তবে মমতাকেও তিনি এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিরোধি “গোট বন্ধনের” অন্যতম অঙ্গ কংগ্রেস। আর এই প্রসঙ্গেই কৌস্তভের প্রতিক্রিয়া, ,” বাংলায় নিয়োগ কেলেঙ্কারি সহ নানা দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরূদ্ধে সাধারণ কংগ্রেসে কর্মীরা আপ্রাণ লড়ছেন। রাহুল ও জয়রাম রমেশকে অনুরোধ করবো, মমতার প্রশস্তি না করে রাজ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাধারণ কংগ্রেস কর্মী দের পাশে দাড়ান। না হলে তাদের মন ভেঙে যাবে।”
তবে এদিন রাহুলের ন্যায় যাত্রাকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে জলপাইগুড়ি। কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ টিম রাহুলের বাস আটকে দিচ্ছিল আসলে রবিবার কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রার পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে পরীক্ষা ছিল। সেই কারণে সকাল থেকেই নিরাপত্তার মুড়ে ফেলা হয়েছিল নানা এলাকা। জলপাইগুড়ি শহরে একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছে। তার সাথে আবার রাহুলের ন্যায় যাত্রা। বেলা সাড়ে এগারোটায় বাগডোগরায় নামেন রাহুল। এদিন সকালে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর মোড়ে ন্যায় যাত্রার বাস ঢোকার মুখেই পুলিশ আটকে দেয় বলেই অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা।
পুলিশ আধিকারিকদের মতে, পরীক্ষার জন্যই বাস আটকানো হয়েছে। এদিকে , শনিবার ধূপগুড়ির একাধিক এলাকায় কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর পোস্টার ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দলীয় কর্মীরা। অবশ্য সরকারি নির্দেশ মেনেই রাজ্য পুলিশ কনস্টেবলের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই দুপুর নাগাদ পদযাত্রা শুরু করেন রাহুল। লক্ষনীয়,
শিলিগুড়িতে রাহুলের ন্যায় যাত্রা-য় সামিল হল বামেরা। লাল পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলে দেখা যায় বাম কর্মী-সমর্থকদের। অন্যদিকে, নীতীশ কুমারের এনডিএ জোটে ফিরে যাওয়া নিয়ে জয়রাম রমেশ বলেছেন, “যে যেতে চায় যেতে দিন।”
এদিন দক্ষিণ কলকাতায় দলীয় পদযাত্রার শেষে হাজরায় কলকাতার মেয়র বলেন, ” মমতা সিপিআইমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সি পি এম পার্টিটাই আর নেই। মমতার বি জে পি ‘ র বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যে লড়াইয়ের শেষে বি জে পি ‘ ই শেষ হয়ে যাবে। “ফিরহাদের সাথে এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভপতি দেবাশীষ কুমার।