পশ্চিম এশিয়ার প্রান্তে সৌদি আরবের দক্ষিণে ছোট্ট দেশ ইয়েমেন। তার দু’দিকের উপকূল জুড়ে রয়েছে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর। এক দিকে রয়েছে আরব সাগর। এই জলপথে বহু বাণিজ্যতরী প্রতি দিন যাতায়াত করে। ইয়েমেনের হুথিরা সেই জাহাজ আক্রমণ করে বাণিজ্যে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। আপাতত তা-ই থামাতে বলেছেন ট্রাম্প। ইরানের উদ্দেশে ট্রাম্পের বার্তা, ‘‘অবিলম্বে হুথিদের সমর্থন করা বন্ধ করুন। ইরান থেকে আমেরিকার উপরে যদি কোনও হুমকি আসে, তার দায় সম্পূর্ণ আপনাদের। এর ফল খুব একটা ভাল হবে না।’’
লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে একাধিক হামলার পর এবার ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড়সড় সামরিক অভিযানে নামল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো এই অভিযানে অন্তত ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। হামলার পর কড়া বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হুথিরা যদি তাদের কার্যকলাপ বন্ধ না করে, তাহলে তাদের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
শুধু হুথি নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য ইরানকেও সতর্ক করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানকে অবিলম্বে হুথিদের সহায়তা বন্ধ করতে হবে। আর যদি আমেরিকাকে হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ মার্কিন সেনা সূত্রের খবর, এই অভিযানে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী থেকে যুদ্ধবিমান উড়ে গিয়ে হুথি ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায়।
অভিযানের বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামরিক অভিযান কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক চাপ তৈরি করছে, তখনই এই হামলা চালানো হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াশিংটন হুথিদের নিশানা করে মূলত তেহরানকেই বার্তা দিচ্ছে। তবে ইরান এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নয়।
অন্যদিকে, হুথিদের নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় মার্কিন হামলায় অন্তত ১৩ জন সাধারণ নাগরিক নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। সা’দা প্রদেশে আরও এক হামলায় চার শিশু ও এক নারীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত ১১ জন। হুথিদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। সানার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হামলার ফলে বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র ছিল যে আশপাশের এলাকাগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর ১০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে। গাজায় হামাসের প্রতি সংহতি জানাতেই তারা এই হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে। বাইডেন প্রশাসন হুথিদের প্রতিহত করতে কিছু সীমিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, তবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের কুর্সিতে বসেছেন ট্রাম্প। তার পর থেকে তিনি পূর্ব ইউরোপের রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কোন পথে সেখানে শান্তি ফেরানো যায়, যুদ্ধবিরতির জন্য কী ভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা যায়, এখনও সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিম এশিয়ায় এটিই তাঁর প্রথম বড় হামলা।