দেশের সময়, বনগাঁ: TMC Shankar Adhya: শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও কাউন্সিলর ছিলেন। রাজনীতির সূত্রে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে শোনা যায়। কিছুদিন আগেই তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু হাজিরা এড়িয়ে যান তৃণমূল নেতা। নিজে যাওয়ার বদলে পাঠিয়ে দেন কিছু নথিপত্র।  

নতুন বছর পড়তে না পড়তেই ফের ইডির হানা। উত্তর ২৪ পরগনায় দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে হানা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুক্রবার সকালে ইডির একটি দল প্রথমে উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছয়। পরে তাঁর বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা। একই সময়ে অন্য একটি দল সন্দেশখালির এক তৃণমূল নেতার বাড়ির কাছে পৌঁছে যায়। ওই তৃণমূল নেতার নাম শাহজাহান শেখ বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, শঙ্কর এবং শাহজাহান, দু’জনেই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)-র ‘ঘনিষ্ঠ’। 

শুক্রবার কাকভোরে যেভাবে অভিযান শুরু করেছে ইডি, তাতে স্পষ্ট যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তদন্তেই চলছে এই তল্লাশি। দুই ২৪ পরগনা ও কলকাতার একাধিক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। এদিন সকালেই প্রথমে বনগাঁয় যাঁর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি, তাঁর নাম বিনয় ঘোষ। খোঁজ খবর করতেই জানা যায়, এই ব্যক্তির জামাইয়ের নাম শঙ্কর আঢ্য। বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তথা এলাকায় তৃণমূলের দাপুটে নেতাকে শঙ্করকে ‘ডাকু’ নামে চেনে সবাই। তাঁর খোঁজেই এই তল্লাশি বলে সূত্রের খবর। তবে বিনয় ঘোষের বাড়িতে শঙ্কর আছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সূত্রের খবর, শঙ্করের নামে রয়েছে একাধিক সংস্থা। সেগুলিই এবার চলে এসেছে ইডি-র নজরে। শঙ্কর এবং তাঁর পরিবার একাধিক বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলেও খবর রয়েছে ইডি-র কাছে। অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছ বলেও সূত্রের খবর। শঙ্করের স্ত্রী, ছেলে এবং একাধিক আত্মীয় এই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন বলেও জানা যায়। বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার আড়ালে কি কোনও আর্থিক বেনিয়ম ঘটেছে? সেই খোঁজই চালাচ্ছে ইডি। তবে এই আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে রেশন বা শিক্ষা দুর্নীতির যোগ আছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও কাউন্সিলর ছিলেন। রাজনীতির সূত্রে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে শোনা যায়। কিছুদিন আগেই তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু হাজিরা এড়িয়ে যান তৃণমূল নেতা। নিজে যাওয়ার বদলে পাঠিয়ে দেন কিছু নথিপত্র।

একসময় প্রবল দাপট থাকলেও ২০২১-এ বনগাঁ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল হেরে যাওয়ার দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শঙ্কর আঢ্যকে। এরপর তিনি গত বছর আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন তিনি। জেলার অ্যাডভাইজরি কমিটিতে তাঁকে জায়গা দেয় তৃণূল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ বনগাঁর শিমুলতলায় শঙ্করের শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয় ইডি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেখানে তল্লাশি অভিযান চলছে। পরে তাঁর বাড়িতেও যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাত জন আধিকারিক। তবে শঙ্কর বাড়ির ভিতরে রয়েছেন কি না, সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি। সূত্রের খবর, বালুর হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করেন শঙ্কর। ২০০৫ সালে প্রথম বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর হন। পরে বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান হন। শঙ্করের স্ত্রী-ও পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।

অন্য দিকে, সকাল সাতটা নাগাদ সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়ির কাছে পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি দল। তবে সেই বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। অনেক ক্ষণ ডাকাডাকির পরেও কারও সাড়া না মেলায়, সেই বাড়ির তালা ভাঙার চেষ্টা করেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেই সময় বেশ কয়েক জন স্থানীয় ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। ইডি আধিকারিকদের ঘিরে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেও সরব হন তাঁরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে স্থানীয়দের একাংশের বিরুদ্ধে।

ইডি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, রেশন দুর্নীতি মামলায় এই দুই তৃণমূল নেতার যোগ থাকলেও থাকতে পারে। তা খতিয়ে দেখতেই দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here