বনগাঁ : তৃণমূলের নেতানেত্রীদের বিরোধের জেরে অশান্তি ছড়াল বনগাঁয় ৷ ঘটনার সূত্রপাত দোলের দিন দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা৷। একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য, উপপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য , কংগ্রেসপ্রার্থী মলয় আঢ্য ও বর্তমান পুরপ্রধান গোপাল শেঠের অনুগামীরা।
দোলের দিন কয়েকটি ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে গন্ডগোল, তার জেরে মহিলাদের মারধোর ও শীলতা হানির অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ। অভিযোগ, শুক্রবার বনগাঁর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা।সেই সঙ্গে মহিলাদের মারধরও করা হয় বলে খবর৷
৩ নম্বর ওয়ার্ডের আহত তৃণমূল কর্মীরা৷
এদিন রাতেই থানায় নালিশ জানাতে গিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ বাধে থানা চত্বরেই। উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হয়। এরপর থানার বাইরে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভ ছড়ায় থানার বাইরেও৷ একসময় বিক্ষোভকারিরা পৌঁছে যায় থানার ভিতরেও।
বনগাঁ থানার মধ্যে তখন চলছে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি।
বনগাঁর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই সমস্যা সামাল দিতে পুলিশ রীতিমতো হিমশিম খায়। তবেএখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে এলাকা বেশ থমথমে।
আহত এক বিক্ষোভকারী ৷প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, বারবার ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কেন গন্ডগোলের সৃষ্টি হচ্ছে? ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেতো কংগ্রেসপ্রার্থী আমার কন্যা ঋতুপর্ণা আঢ্য জিতেছে , ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য এই সব ওয়ার্ডেতো কোন সমস্যা নেই, কিন্তু ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমার ভাই মলয় আঢ্য প্রতিদ্বন্দ্বি কংগ্রেসপ্রার্থী ছিলেন সেখানেই যত সমস্যা! এখানে কোন গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই, থানায় এসে কারা হকিষ্টিক নিয়ে ঢুকল বা গন্ডগোল করল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সঠিক বিচার হোক৷ আমার মনে হয় পুলিশ ও পুর প্রধান ও উপ প্রধান এবং স্থানীয় নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসে এর সুস্থ সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত৷ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য জানান, আমাদের ঘরের ওয়ার্ড ৩ নম্বর ও ১৭ নম্বর সেখানে মানুষ মার খাবে কেন? আমরা এখানে ভাট পাড়া হতে দেব না ৷ এখানে গন্ডগোল হচ্ছে নিজেদের মধ্যে৷ , তৃণমূলে তৃণমূলে সব হচ্ছে আমরা একই সব৷দলের স্থানীয় স্তরে প্রথমে সমস্ত ব্যপারটা জানিয়েছি, কোন কাজ না হলে দলের শীর্ষ নেতাদেরকে বিষয়টি জানাব।৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রতিনিধি মলয় আঢ্য বলেন, ভোটে গোপাল শেঠ জিতেছেন তারপর থেকে এই ওয়ার্ডে আমার সমর্থনে যারাছিল তাঁদের উপরে অত্যাচার শুরু হয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মেশিন, হকিষ্টিক দিয়ে ভয় দেখিয়ে মহিলাদের উপরেও শারিরীক অত্যাচার করছে বলে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেন৷বন্গাঁর বিজেপি নেতা তথা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবদাস মন্ডল বলেন,শুধু বনগাঁ নয় গোটা বাংলায় পুলিশ-প্রশাসন বলে কিছু নেই।গত কাল রাতে থানা হামলা হয়েছে৷ স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন৷ সবাই দেখেছে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিভাবে থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে ৷ একজন তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে একজন কংগ্রেসের কাউন্সিলর এবং ৩নম্বর ওয়ার্ডের এবারের প্রার্থীও ছিলেন ৷ অর্থাৎ এটা পরিষ্কার এখানে কংগ্রেস তৃণমূল একটা গুরুপে এক, আরেকটিতে শুধু তৃণমূল৷ ৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে এখানে৷ সাধারণ মানুষ ব্যাপক আতঙ্কে আছেন৷পুরপ্রধান গোপাল শেঠ জানান, রং খেলাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ঝামেলা হয়েছিল, পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের উপস্থিতিতে সে সমস্যা মিটেও যায়৷ পরবর্তীতে কংগ্রেসের কিছু লোক গিয়ে সেই গন্ডগোল উষ্কে দেয় এবং নতুন করে গন্ডগোলের সূচনা হয়৷ এই ঘটনার মধ্যে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানও কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, যা আমাদের অবাঞ্চিত বলে মনে হয়েছে৷ দলকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি৷ দল থেকে যে নির্দেশ আসবে তা জেনে জেলার সভাপতি হিসাবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷
শনিবার দুপুরে বনগাঁ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে দলীয় নেতৃত্ব ও বনগাঁ পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ । ওই বৈঠক থেকে সমস্ত দলীয় নেতৃত্বের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি লিখে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানানো হচ্ছে বলে জানান গোপাল বাবু। তিনি আরো বলেন এটা কোন দলীয় কোন্দল নয় কংগ্রেস প্রার্থীর অনুগামীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে । বনগাঁয় কংগ্রেসের ব্যানার নিয়ে কিছু লোক সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আমাদের কেউ কেউ তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে । শুক্রবারও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তারা সন্ত্রাস চালিয়েছে৷ পাশাপাশি তারা আমাদের বলে চালানোর চেষ্টা চলছে । আমরা প্রশাসনিকভাবে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে জানাচ্ছি । এবং দলের কাছে সব ঘটনা জানানো হচ্ছে বলেও জানান গোম্পালবাবু ।
প্রসঙ্গত , শুক্রবারই বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুস্কৃতীরা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে জানা গিয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷