দেশের সময়: গত বছর পুজোর আগে সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। এর জেরে বিপুল পরিমাণ বালি, পাথর এবং পলি আছড়ে পড়ে তিস্তায়। সেসব বয়ে নিয়ে এসে সমতলে জমা করে নদী। তারপর এবছর বর্ষার শুরু থেকে পাহাড়ে লাগাতার ধস নামছে। ওই ধসের জেরে পাহাড় থেকে বোল্ডার, পাথর, নুড়ি ও কাদা মাটি গড়িয়ে পড়ছে তিস্তা নদীতে। ফলে সেসব নদী বক্ষে জমা হতে হতে কোনও জায়গায় তিস্তা ৫ ফুট উঁচু, কোথাও আবার ৮ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছে। নদীবক্ষ উঁচু হয়ে যাওয়ায় তিস্তা হয়ে উঠেছে অস্থির। ঘনঘন বাঁক নিচ্ছে উত্তরবঙ্গের এই খরস্রোতা নদী। কখনো বাঁদিকে আবার কখনো ডান দিকে গতিপথ বদল করছে তিস্তা। আর এরই জেরে চরম উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

সেচ দপ্তর ইতিমধ্যেই সেভকের পর থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, তিস্তা নদীর খাত এতটাই উঁচু হয়ে গিয়েছে যে, নদীর ওপারের বেশ কিছু জনপদ যথেষ্টই ঝুঁকির মধ্যে চলে এসেছে। পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হলে তিস্তায় যদি আচমকা জল বেড়ে যায়, তাহলে নদীর পাড়ের ওই সমস্ত জনপদ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্লাবিত হতে পারে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে সেচ দফতরের তরফে।

এদিকে ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীতেই ডুয়ার্সের একটি বড় অংশে বিপদের আঁচ করছেন সেচ দফতরের আধিকারিকরা। রেতি, সুকৃতি, পানা, বাসরা, তোর্সা, রায়ডাক সহ ভুটান পাহাড় থেকে ত্রিশটিরও বেশি নদী নেমে এসেছে। ওই সব নদী ক্রমাগত ভুটান পাহাড় থেকে পাথর, বোল্ডার এবং ডলোমাইট বয়ে নিয়ে এসে জমা করছে সমতলে।

ফলে ওই সমস্ত নদীর তলদেশও অনেকটাই উঁচু হয়ে গিয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, জয়গাঁ এলাকায় জনপদের থেকে নদী প্রায় কুড়ি ফুট উঁচু দিয়ে বইছে। ফলে নদীতে জল বাড়লে যে কোন মুহূর্তে তা আছড়ে পড়তে পারে জনপদের উপর। সেক্ষেত্রে তলিয়ে যেতে পারে গোটা এলাকা। সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভুটানে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের জন্য লাগাতার পাহাড় ফাটানো হচ্ছে।

কিন্তু পাথর, বোল্ডার সরাচ্ছে না ভুটান প্রশাসন। বৃষ্টিতে সেসব নদীতে এসে পড়ছে। তারপর সেগুলি নদী বয়ে নিয়ে এসে জমা করছে ডুয়ার্সের সমতলে। রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা ইন্দো ভুটান নদী কমিশন চাইছি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অত্যন্ত তৎপর। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নেওয়ায় বাংলায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, ইন্দো বাংলাদেশ ও ইন্দো নেপাল নদী কমিশন রয়েছে। কিন্তু ইন্দো ভুটান নদী কমিশন আজও তৈরি হয়নি।

দুদেশের নদী নিয়ে আলোচনা করার জন্য এখন যে কমিটি রয়েছে তা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল কমিটি। ওই কমিটি সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এর জন্য মন্ত্রী পর্যায়ে কমিটি দরকার। ইন্দো ভুটান যৌথ নদী কমিশন হলেই তা সম্ভব। ফলে দ্রুত ওই কমিশন যাতে গঠন করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে তা নিয়ে চিঠি লেখা হবে।



