দেশের সময় : গত দুবছর করোনা অতিমারির কারণে আসতে পারেননি পুণ্যার্থীরা৷ তারাপীঠে প্রতিবছর কৌশিকী অমাবস্যায় পাঁচ লক্ষের বেশি ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে। তবে গত দু’বছর ধরে করোনা সংক্রমণ চলার কারণে ভক্তদের ভিড়ের ক্ষেত্রে লাগাম টানা হয়েছিল। রীতিনীতি মেনে পূজার্চনা হলেও বাকি ভক্তদের অবাধ প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা।তবে এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ ফলে অবাধ প্রবেশের সুযোগ ছিল ভক্তদের৷
নিরাপত্তারও কোনও ঘাটতি ছিল না৷ আঁটোসাঁটো নিরাপত্তাতেই চলেছে আরাধনা৷ তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ রয়েছে অ্যান্টি ক্রাইম টিম৷ মহিলাদের নিরাপত্তায় বিশেষ সুরক্ষা বাহিনীও থাকছে৷ যে কোনও অপরাধ এড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
তবে অতিমারির ধাক্কায় দু’বছর এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা। তারাপীঠের পর্যটন ও ব্যবসায়ী মহল তাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন কৌশিকী অমাবস্যার দিকে। ভেবেছিলেন, দু’বছরের ক্ষতির ধাক্কা কিছুটা পুষিয়ে নেবেন এ বার। কিন্তু, প্রত্যাশা মতো ভিড় না-হওয়ায় যারপরনাই হতাশ তারাপীঠের হোটেল-লজ মালিক এবং ছোট-বড় ব্যবসায়ীরাও। মুখ ভার সেবায়েত, পুরোহিতদেরও। তাঁরা তাকিয়ে আছেন আজ, শনিবারের দিকে।
পাশাপাশি উপস্থিত ভক্তদেরও মন খুব খারাপ৷ হোটেলের ভাড়া আকাশ ছোঁয়া৷ এসি ২৫ হাজার, নন এসি ঘরের ভাড়া ১৫ হাজার৷ তাই ভুরু কুঁচকেছেন অনেক পুণ্যার্থীরা৷
শুক্রবার দুপুর বারোটার পরে কৌশিকী অমাবস্যা তিথি শুরু হয়েছিল। আজ শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে। শুক্রবার বিকেলেও তারাপীঠে দর্শনার্থীর সেই চেনা সমাগম ঘটেনি। অধিকাংশ লজের বহু ঘর এখনও ফাঁকা। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই সমস্ত লজের ঘর ভর্তি হবে কিনা তাই নিয়ে চিন্তায় ভাজ পড়তে দেখা যায় মালিকদের অথচ অন্যান্য বছর কৌশিকী অমাবস্যার সময় তারাপীঠে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। তিল ধারণের জায়গা থাকে না হোটেল-লজে।
তারাপীঠ মন্দির কমিটি থেকে শুরু করে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ ও তারাপীঠ লজ মালিক সমিতি সব মহলই আশা করেছিল, এ বছর ৫ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে।
পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। তারাপীঠ আসার জন্য হাওড়া থেকে রামপুরহাট বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, ভিড় তেমন না-হওয়ায় হতাশ সকলেই।
পুজো প্রস্তুতিতে অবশ্য খামতি ছিল না। আলো ও ফুলে সাজানো হয়েছে মন্দির চত্বর। মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কৌশিকী অমাবস্যায় মা তারাকে দু’বার অন্নের ভোগ নিবেদন করা হয়।
কৌশিকী অমাবস্যার বিশেষ তিথিতে মা তারার নিশিপুজো হয়। ওই সময় মাকে স্বর্ণালঙ্কার ও ডাকের সাজে সাজানো হয়। নিশিপুজোর সময় খিচুড়ির ভোগ নিবেদন করা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য সারারাত মন্দির খোলা থাকবে।
কৌশিকী অমাবস্যায় কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে প্রথম দিকে ধোঁয়াশা থাকলেও বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের রুপরেখা তৈরি করা হয়। এই রূপরেখা তৈরি হওয়ার পর নিশ্চিন্তে ভক্তদের আসার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকছে না।
চলতি বছর ভাদ্র মাসের অমাবস্যা অর্থাৎ কৌশিকী অমাবস্যা ছিল ২৬ অগাস্ট। এই কৌশিকী অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রশাসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে তারাপীঠ।