Tahawwur Rana এনআইএ দফতরে রানা ! কী কী প্রশ্ন করতে পারে তাহাউরকে?

0
14

২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রকারী তাহাউর হুসেন রানাকে অবশেষে আমেরিকা থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। রাজধানীতে তাহাউর রানা। মুম্বই হামলার প্রধান চক্রী ছিলেন এই তাহাউরই, আদালতে দাবি করেছে এনআইএ। তাঁর বয়স এখন ৬৪ বছর। ভারতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করে ১৮ দিনের জন্য এনআইএ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ আদালতের নির্দেশে। ২৬/১১-র ওই অভিশপ্ত দিনে কীভাবে হামলা হয়েছিল, তার পরিকল্পনা কীভাবে করা হয়েছিল, এই সব প্রশ্নের উত্তরই তাহাউরের পেট থেকে বের করতে চায় এনআইএ।

বিমান থেকে নামার পরে পালাম বিমানবন্দরে দেখা যায়, সাদা চুল, ঘন দাড়ি, বাদামি জ্যাকেট পরা রানাকে হাতকড়া পরিয়ে এনআইএ জওয়ানদের সঙ্গে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ছবিটা যেন একদিকে ন্যায়বিচারের পথে ভারতের এগিয়ে যাওয়ার এক অনন্য মুহূর্ত, অন্যদিকে তেমনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনেও এক কূটনৈতিক সাফল্য।

ভারতে অবতরণ করা মাত্রই তাহাউরকে গ্রেফতার করে এনআইএ। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাহাউরকে জেরা করছে এনআইএ। নয়া দিল্লিতে এনআইএ-র সদর দফতরে তৃতীয় তলায় তাহাউর রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা এনআইএ আইজি, ডিআইজি স্তরের কর্মকর্তাদের। ২৪ ঘণ্টাই তাহাউরকে সিসিটিভির নজরদারিতে রাখা হবে। উপস্থিত থাকবেন স্পেশাল সেল কম্যান্ডোরাও।

সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘেরা ও চব্বিশ ঘণ্টা নিরাপত্তার আওতায় এনআইএ সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় রানাকে। তাঁকে রাখা হয়েছে, ১৪ বাই ১৪ ফুটের একটি ঘরে। সেখানে একটি খাট ও টয়লেট রয়েছে। ওই ঘরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে মাত্র ১২ জন নির্ধারিত এনআইএ কর্মকর্তার।

তাহাউর রানাকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে আজ, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে। সিসিটিভির আওতায় একটি বিশেষ রুমে চলছে জেরা। জানা গেছে, তাঁর প্রত্যেক প্রশ্নোত্তরের রেকর্ড রাখা হবে একটি ‘ইন্টারোগেশন ডায়েরি’তে। ১৮ দিনের হেফাজতের শেষে একটি ‘ডিসক্লোজার স্টেটমেন্ট’ প্রস্তুত করা হবে, যা আদালতে পেশ করা হবে।

জানা গেছে, তদন্তের প্রথম ধাপে রানার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বিশদ তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হলেন? ২০০৮ সালে ভারত সফরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কেন এসেছিলেন? পরিবারের অন্য সদস্যরা কি ডেভিড হেডলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা জানতেন কিনা, ইত্যাদি।

এনআইএ সূত্র অনুযায়ী, রানাকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হচ্ছে :
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, যখন হামলাগুলো শুরু হয়েছিল, তখন তিনি কোথায় উপস্থিত ছিলেন?
তিনি কেন সেই বছরের ৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ভারত সফর করেছিলেন?
সেই সময় তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন এবং কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন?
তিনি কবে প্রথম মুম্বই হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারেন?
ডেভিড হেডলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গভীরতা কতটা ছিল?

কেন তিনি হেডলির জন্য একটি ভুয়ো ভিসা সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন?
হেডলি ভারতে থাকাকালীন রানার কাছে কী ধরনের তথ্য পাঠাতেন?
হেডলির সঙ্গে রানার আলোচনায় কি হামলার বিশদ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিল?

সম্ভাব্য লক্ষ্য ঠিক করা ও নজরদারির কাজে রানার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা কতটা ছিল?
হেডলিকে লস্কর-ই-তইবার জন্য কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে তিনি কীভাবে সাহায্য করেছিলেন?
তিনি কি হামলার কোনও রকম লজিস্টিক পরিকল্পনা বা অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন?

হেডলি ছাড়াও তিনি কি অন্য কোনও  লস্কর বা আইএসআই-এর কোনও সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন?

মুম্বই হামলা থেকে প্রশ্ন সরবে রানার সঙ্গে লস্কর-যোগের দিকে। সূত্র অনুযায়ী, কর্মকর্তারা জানতে চাইবেন:

তিনি কবে এবং কীভাবে লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন?

তাঁদের সম্পর্কের ধরন কী ছিল?
তিনি কি লস্করকে লজিস্টিক বা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন?
যদি দিয়ে থাকেন, তবে বিনিময়ে সংগঠনটি তাঁকে কী দিয়েছে?
রানা কি লস্করের অন্য সদস্যদের নাম, চেহারা বা ভূমিকা অনুযায়ী শনাক্ত করতে পারেন?
লস্করের কাঠামো, সদস্য নিয়োগ পদ্ধতি এবং অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে তাঁর ধারণা কী?
কারা এই সংগঠনের অস্ত্র সরবরাহ করে এবং কোন কোন দেশ এতে জড়িত বলে মনে করা হয়?

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং আইএসআই কীভাবে প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন এবং লক্ষ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত?
রানা কি লস্কর ও হুজি-পরিচালিত প্রশিক্ষণ শিবির সম্পর্কে জানেন?

এই প্রক্রিয়ায় কতজন আইএসআই অফিসার যুক্ত থাকেন
প্রশিক্ষণের সময় ঠিক কী শেখানো হয়?
হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কে নেয়?

নির্দেশনা কি সরাসরি আইএসআই-কর্তাদের থেকে আসে, নাকি লস্করের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পৌঁছে যায়?
তরুণদের আত্মঘাতী মিশনের জন্য প্রস্তুত করতে কী ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব প্রয়োগ করা হয়?

একটি সাধারণ হামলার পরিকল্পনায় কতজন ব্যক্তি যুক্ত থাকেন, তাঁদের নির্দিষ্ট ভূমিকা কী কী?
পাকিস্তানি আইএসআই সংযোগ নিয়েও অনুসন্ধান চালাবে এনআইএ। সম্ভাব্য কিছু প্রশ্ন হতে পারে:
হেডলি কি রানার সঙ্গে আইএসআই-এর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, নাকি উল্টোটা ঘটেছিল?

আইএসআই-এর লক্ষ্য কী ছিল?
মুম্বই কি একমাত্র নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল, নাকি ভারতের অন্য শহরগুলোতেও হামলার পরিকল্পনা ছিল?

এনআইএ-র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মেজর ইকবাল ও সামির আলি ছাড়াও কি আরও কোনও শীর্ষ আইএসআই-কর্তা হেডলি ও রানার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন?
হামলার লজিস্টিক ব্যবস্থার অর্থায়নের দায়িত্ব কার ছিল?
আইএসআই কি পাকিস্তান সরকারের সম্মতিতেই কাজ করছিল?

হামলার সময়ে একটি রিয়েল-টাইম যোগাযোগ সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সংযোগে কে ছিলেন?

তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ ও তদন্ত শুধু ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি বড় জয় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। এই মামলার মাধ্যমে ২৬/১১ হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে বলে আশা গোটা দেশের। রানার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে লস্কর ও আইএসআই-এর বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ উঠে আসবে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Previous article২০০ বছরের পুরনো বাংলায় ছাপার ‘হরফ’প্রদর্শিত হল কলকাতায় খিলাত ঘোষের বাড়িতে : দেখুন ভিডিও
Next articleMurshidabad ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে  উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ , ৩৫৫-র দাবি বিজেপির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here