প্রতীক্ষা শেষ, ১৩ বছর পর ভারত টি ২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। স্বপ্নপূরণ রোহিত শর্মার ভারতের। ১৩ বছর পরে তারা বিশ্বসেরা। হার্দিকের ম্যাচ জেতানো বোলিং সবাই মনে রাখবে। ভারতের জয় সাত রানে।
দেশের সময়, ওয়েবডেস্কঃ ম্যাচের শেষ বলের পর উপুর হয়ে মাঠে শুয়ে পড়লেন রোহিত শর্মা। কান্নায় ভাসিয়ে দিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। বার্বাডোজে স্টেডিয়ামে ভেসে এল একটাই গান, চক দে ইন্ডিয়া। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতের বিশ্বজয়। অবশেষে এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। কাটল ১১ বছরের খরা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত।
শনিবার বার্বাডোজে কেনসিংটন ওভালে ৭ রানে জিতলেন রোহিতরা। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। হার্দিক পাণ্ডিয়ার বলে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমার যাদবের দুর্ধর্ষ ক্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ক্যাচের মধ্যে নিঃসন্দেহে জায়গা পাবে। মিস করলেই ছয়। সেখানে সবাইকে অবাক করে তালুবন্দি করলেন সূর্য। ম্যাচ পকেটে। পার্থক্য গড়ে দিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। প্রায় হারা ম্যাচ জেতালেন দেশকে। হেনরিচ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলারের দুটো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের বিশ্বজয় নিশ্চিত করলেন হার্দিক। ম্যাচের সর্বোচ্চ রান বিরাট কোহলির। ৫৯ বলে ৭৬ করেন। বার্বাডোজে আদর্শ ফাইনাল। জয় ক্রিকেটের।
২০১৩ সালের পর প্রথম আইসিসি ট্রফি জয়। ২০১১ সালের পর প্রথম বিশ্বকাপ। ধোনির পর রোহিতের হাত ধরে বিশ্বজয়। ভারতের মোট চারবার। দু’বার একদিনের বিশ্বকাপ, দু’বার টি-২০ তে। ২০০৭ সালে উদ্বোধনী টি-২০ বিশ্বকাপের পর আবার চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন রেকর্ড গড়লেন রোহিতরা। ঠিক সাত মাস দশ দিন আগে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের স্বপ্নভঙ্গের রাতে কিছুটা প্রলেপ লাগালেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল সুদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। গত কয়েকবছর ধরে যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আইসিসি ট্রফি প্রাপ্য ছিল রোহিতের।
শুধুমাত্র অধিনায়ক তকমায় আটকে নেই হিটম্যান। সেটা ছাপিয়ে একজন যোগ্য ‘লিডার’ এ পরিণত হয়েছেন। যোগ্য স্বীকৃতি পেলেন। অবশেষে বিদায় লগ্নে বিশ্বকাপ জিতলেন রাহুল দ্রাবিড়। রোহিত-বিরাট জুটিতে প্রথম বিশ্বকাপ। আহমেদাবাদের অধরা স্বপ্ন পূর্ণ হল বার্বাডোজে। ভারতের জয় পোয়েটিক জাস্টিস। প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি।
ফাইনাল জয়ের অন্যতম কান্ডারী সেই ‘ভিন্টেজ’ বিরাট কোহলি। ব্যাট দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেন তিনি। ৫৯ বলে ৭৬ রান করেন। ইনিংসে ছিল ২টি ছয়, ৬টি চার। গোটা বিশ্বকাপে তাঁর রান না পাওয়া নিয়ে, ব্যাটিং পজিশন নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়। তাঁর ওপেন করা উচিত কিনা সেই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু ফাইনাল মঞ্চে বিরাট পারফরম্যান্স। নিজের ইনিংসকে তিন ভাগে সাজান।
প্রথম ওভারে তিনটে কপিবুক চার। তারপর পাওয়ার প্লের মধ্যে ভারত দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর পুরোনো কোহলিকে পাওয়া যায়। সতর্কতায় মোড়া ইনিংস খেলেন। কোনও ঝুঁকি নেননি। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে জোর দেন। উইকেটের অন্য প্রান্তে খেলতে দেন অক্ষর প্যাটেলকে। ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর জন্য ভারতীয় অলরাউন্ডারের প্রশংসা প্রাপ্য। বিরাটের থেকে চাপ নিয়ে নেন। মহাতারকাকে নিজের গতিতে খেলতে দেন। চতুর্থ উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন কোহলি-অক্ষর জুটি। ৩১ বলে ৪৭ রান করেন। ইনিংসে ছিল ৪টি ছয়, ১টি চার। ৪.৩ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। এদিন রান পাননি রোহিত। মাত্র ৯ বলে আউট হন।
দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন ঋষভ পন্থ (০) এবং সূর্যকুমার যাদব (৩)। দু’জনেই উইকেট উপহার দেন। শেষদিকে ১৬ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৭ রান যোগ করেন শিবম দুবে। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ১২ রানে জোড়া উইকেট হারায়। ফিরে যান রেজা হেন্ডরিকস (৪), আইডেন মার্করাম (৪)। ট্রিস্টান স্টাবসকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৫৮ রান যোগ করেন কুইন্টন ডি কক। ২১ বলে ৩১ করে আউট হন স্টাবস। একটা দিক ধরে রেখেছিলেন ডি’কক। উইকেটের অন্য প্রান্তে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন হেনরিচ ক্লাসেন। ডি কক, ক্লাসেন ব্যাট করার সময় ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। একটা সময় মনে হয়েছিল ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। দুর্দান্ত খেলেন ক্লাসেন।
ছয়ের বন্যা বইয়ে দেন। বল এবং রান প্রায় সমান সমান ছিল। বড় চেহারার প্রোটিয়া ব্যাটার উইকেটে থাকাকালীন মনে হয়েছিল ম্যাচ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্লাসেন আউট হতেই আবার ম্যাচে ফেরে ভারত। রোহিতদের ম্যাচে ফেরান হার্দিক। ৫টি ছয়, ২টি চারের সাহায্যে ২৭ বলে ৫২ রান করে আউট হন ক্লাসেন।
হার্দিকের বলে উইকেটের পেছনে পন্থের হাতে ধরা পড়েন। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। দলকে বৈতরণী পার করাতে পারেননি ডেভিড মিলার। শেষ ওভারে ২১ রানে ফেরেন। অক্ষরের এক ওভারে ২৩ রান ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু বুমরা, হার্দিক, অর্শদীপরা দলকে জয়ে ফেরালেন।
ভারতের সফলতম বোলার হার্দিক ২০ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ১৮ রানে ২ উইকেট বুমরার। ২০ রানে ২ উইকেট আরশদীপের। ৪৯ রানে ১ উইকেট অক্ষরের। ফাইনালে ৪৫ রান খরচ করলেও উইকেটহীন থাকতে হল কুলদীপ যাদবকে।