দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়াতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের স্লোগান শুনে মেজাজ হারালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যা নিয়ে আশুতোষ কলেজের পাশের গলিতে হইহই কাণ্ড বাঁধল সোমবার দুপুরে।
তৃণমূলের বড় জয়ের দিন হাজরাতে বিক্ষোভের মুখে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় নিহত সেনা জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ওই এলাকার বিজেপি। সেখানেই যান শুভেন্দু।
আশুতোষ কলেজের পাশে শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বলে পরিচিত পড়ুয়াদের একাংশ। বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তারক্ষীরা কোনওভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান। জানা গিয়েছে, পুলওয়ামায় শহীদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আশুতোষ কলেজের পাশেই এক কর্মসূচিতে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানোর সেই কর্মসূচিতেই তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের সমর্থক পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁকে ঘিরে গো ব্যাক স্লোগানও তোলেন পড়ুয়ারা।
শুভেন্দু জওয়ানদের ছবিতে মালা দিয়ে ফেরার সময়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। একদল ছেলে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে তারস্বরে স্লোগান দিচ্ছিলেন—চোর চোর চোরটা, শিশিরবাবুর ছেলেটা। জানা গিয়েছে তাঁরা সকলেই তৃণমূল ছাত্রপরিষদের কর্মী-সমর্থক।
বিরোধী দলনেতা সেখানে পৌঁছাতেই তাঁর আপ্তসহায়ক এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের এক প্রস্থ ধস্তাধস্তির পরিবেশ তৈরি হয়। তাদের ঘিরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন পড়ুয়াদের একাংশ। সেই সঙ্গে চলতে থাকে গো ব্যাক স্লোগান। তারপরই কোনওরকমে শুভেন্দুকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। শুভেন্দু গাড়িতে ওঠার সময়েও কটূক্তি করতে থাকে পড়ুয়াদের একাংশ। আর তাতে বেজায় চটে যান বিরোধী দলনেতা। গাড়িতে উঠতে গিয়েও পিছন ফিরে তেড়ে যেতে উদ্যত হন তিনি। যদিও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে থামিয়ে দেন।
This is simply unacceptable;@egiye_bangla @jdhankhar1 @chief_west @HomeBengal @CPKolkata @KolkataPolice pic.twitter.com/vSgr1AyFZO
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) February 14, 2022
একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই স্লোগান শুনেই গাড়ির ভিতর থেকে মুখ বাড়িয়ে শুভেন্দু বলছেন, ‘জুতোপেটা করব…।’ এরপর তিনি গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়ে ওই ছেলেদের দিকে কার্যত তেড়ে যান। তাঁর কনভয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ওই দলটিকে পিছন দিকে সরিয়ে দেয়। এরপর রেগে গিয়ে ফিরে আসেন তিনি। এক পুলিশ কনস্টেবল তাঁকে গাড়িতে ওঠার পরামর্শ দিতে তিনি তাঁকেও চড়া মেজাজ নিয়ে বলেন, যান যান , ওদের গিয়ে বলুন।
এরপর অবশ্য আর ঘটনা কিছু এগোয়নি। শুভেন্দুর কনভয় ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যায়। তবে সচরাচর এ ভাবে মেজাজ হারাতে শুভেন্দুকে দেখা যায় না। বেশ কয়েক বছর আগে হলদিয়ায় সিপিএমের মিছিল থেকে এমন কিছু টিপ্পনিসূচক স্লোগান শুনে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দুকে। যদিও সেবার গাড়ি থেকে নামেননি তৎকালীন তৃণমূল নেতা। এদিন সেটাও ঘটল।
উল্লেখ্য, সোমবারই চার পুরনিগমে কার্যত ‘ক্লিন সুইপ’ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বহু প্রতীক্ষার পর শিলিগুড়ি পুরনিগমেও এককভাবে বোর্ড গঠনের পথে মমতার দল। কলকাতা পুরনিগমের ফলাফলই কার্যত প্রতিফলন দেখা গিয়েছে চার পুরনিগমে। আর এরই মধ্যে কলকাতায় বিক্ষোভের মুখে শুভেন্দু অধিকারী। যদিও শুভেন্দু অধিকারী সেখানে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাননি। অথবা, আশুতোষ কলেজের ভিতরেও প্রবেশ করেননি। তিনি গিয়েছিলেন আশুতোষ কলেজের পাশে পুলওয়ামার শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু সেখানে যেভাবে ধস্তাধস্তির পরিবেশ তৈরি হয়, তার জেরে তড়িঘড়ি বিরোধী দলনেতাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে বেরিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। যদিও তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের পড়ুয়ারা সেখানে কী দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।