দেশের সময়: হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, দুপুর তিনটের মধ্যে টেট সংক্রান্ত যাবতীয় নথি নিয়ে হাজির হতে হবে। সেই সময়সীমার আগেই আদালতে হাজির হলেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, টেট পাশ না করেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছেন তিনি। একেবারে বাড়ির পাশেই। বোলপুর কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালে চাকরি পান সুকন্যা। কিন্তু তিনি একদিনও স্কুলে যাননি। বাড়ি বসেই স্কুলের হাজিরা খাতায় সই করতেন। তাঁর বাড়িতে রেজিস্টার খাতা আসত।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই অনুব্রত কন্যাকে টেট সংক্রান্ত যাবতীয় নথি নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেইমতো এদিন সকাল সাড়ে আটটার সময় সুকন্যা বোলপুরের নিচু পট্টির বাড়ি থেকে গাড়িতে রওনা দেন। গতকাল সুকন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইয়ের চারজনের একটি টিম বোলপুরে যায়। কিন্তু তিনি সিবিআইকে সহযোগিতা করেননি সেসময়। বলেন, আমার মা মারা গিয়েছেন কিছুদিন আগে। বাবা সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। এই মুহূর্তে তিনি কথা বলতে পারবেন না।
যদিও হাইকোর্টের নির্দেশের পরই তিনি কলকাতায় আসার প্রস্তুতি নেন। বুধবার সন্ধ্যার পর তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন। তখন মনে করা হয়েছিল, তিনি বোধ হয় রাতেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে আসেন। তার পর শোনা যায়, আজ ভোর বেলা রওনা হবেন।
এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় কিছু বলেননি সুকন্যা। রাস্তায় একটি পেট্রল পাম্পে তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানেও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বেলা ১১.৪০ মিনিট নাগাদ সুকন্যা চিনারপার্কের ফ্ল্যাটে আসেন। মিনিট কুড়ি সেখানে বিশ্রাম নেন। তার পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। ফ্ল্যাটে ঢোকা ও বেরনোর সময় সুকন্যার হাতে কিছু নথি ও ব্যাগ দেখা যায়।
এদিকে, মেয়ের পাশ করা আছে। সার্টিফিকেট আছে। চিন্তা নেই। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারের পর এই প্রথমবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুললেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিজাম প্যালেস থেকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পথেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ খোলেন অনুব্রত। বলেন, মেয়েকে হাইকোর্টে তলব করা হয়নি। নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, মেয়ের পাশ করা আছে।
মেয়েকে নিয়ে তাঁর চিন্তা নেই। মেয়ে ঠিক আছে। ভালো আছে। তবে ইদানীং তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছে না। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, দিদি ঠিকই বলেছেন। বলবেন না? অন্যায় কী বলেছেন। নেত্রী হিসেবে বলবেন না? বলেছেন, কোনও চক্রান্ত হয়নি। সবাই পাশে আছে।
সুকন্যা ছাড়াও অনুব্রতর পাঁচ আত্মীয়কেও কাগজপত্র সহ আজ হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনুব্রতর ভাই, ভাইপো, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও দু’জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাঁরাও এদিন সকালেই বোলপুর ছেড়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, বেনামি অ্যাকাউন্টেও থাকতে পারে গরু পাচারের টাকা। ১৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্তর পর এবার সিবিআইয়ের নজরে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।