দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : কলকাতা ময়দান ভালবেসে তাঁর নাম দিয়েছিল ‘বুলডোজার’। তাঁর পায়েই সম্ভবত মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল সত্তরের দশক। উত্তরবঙ্গের মালদহ থেকে এসে কোনও তথাকথিত গডফাদার ছাড়াই টানা প্রায় এক যুগ ময়দানে রাজত্ব করেছিলেন সুভাষ ভৌমিক। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, পরে কোচ হিসেবেও একের পর এক গৌরবের মুহূর্ত তৈরি করে গিয়েছেন তিনি।
আর সেই বর্ণময় জীবনের (colourful career) ইতি। ফুটবলার থেকে কোচ, মাঠ থেকে ডাগআউট–সবক্ষেত্রের সফল (sucessful) সুভাষ ভৌমিক (subhas bhowmick) প্রয়াত হলেন (passes away)। জীবনের মাঠ ছাড়লেন ময়দানের ভোম্বল। বেশ কিছুদিন ধরে কিডনির অসুখ (kidney disease) নিয়ে একবালপুর নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন তিনি। কোভিডও (covid 19) হয়েছিল তাঁর।
গত এক সপ্তাহ ধরে একবালপুর নার্সিংহোমে চিকিত্সা চলছিল তাঁর। মাঝে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল তাঁকে। পরে বাইপ্যাপ সাপোর্ট খুললেও মাস্ক অক্সিজেনের সাপোর্ট দিতে হচ্ছিল তাঁকে।
একদা ময়দান কাঁপানো সুভাষ ভৌমিকের নানা শারীরিক সমস্যা ছিল। আগে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। কিডনির অবস্থাও ভাল ছিল না। বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালিসিস চলত তাঁর।
এসবের মধ্যেই তাঁর কোভিড ধরা পড়ে। তাই ডায়ালিসিস করা যায়নি নির্দিষ্ট সময়ে। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গত কয়েক দিন ধরেই সুভাষের অবস্থা সংকটজনক ছিল। আজ সব শেষ।
কোচ হিসেবে ইস্টবেঙ্গলকে জাতীয় লিগ এবং আশিয়ান কাপ দিয়েছিলেন সুভাষ। বলা যেতে পারে সুভাষ পর্বের পর আর সেই সোনালি সময় আসেনি ইস্টবেঙ্গলে। শুধু তাই নয় ক্রীড়া পরিকাঠামোকে আধুনিক করার প্রশ্নে ইস্টবেঙ্গলকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ। ক্লাবে জিমনাশিয়াম, জাকুজি বসানো এসবই হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। যা দেখে জগমোহন ডালমিয়া বলেছিলেন, সুভাষ তো ইস্টবেঙ্গল টেন্টকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বানাতে চাইছে। ওই জাকুজি দেখেই ইডেনে বসিয়েছিলেন ডালমিয়া।
প্রকৃত অর্থেই ‘অলরাউন্ড ফরোয়ার্ড’ ছিলেন সুভাষ। আধুনিক ফুটবলের ‘ফল্স নাইন’ (কোনও এক জন বিশেষ ফরোয়ার্ড নয়। প্রয়োজনে সবাই আক্রমণে উঠতে পারে) ঘরানার একেবারে বিপরীত। সুযোগসন্ধানী। ক্ষিপ্রগতি। সঙ্গে তুঙ্গ শারীরিক ক্ষমতা। এই তিন অস্ত্র ধার করে একের পর এক গোল করে গিয়েছেন পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদরের ‘ভোম্বলবাবু’। পরে কোচ হিসেবেও সেই রীতি মেনেছেন। দলে এক বা একাধিক ফরোয়ার্ড থাকে, যাদের কাজ শুধু গোল করা— প্রশিক্ষক হিসেবে এই নীতিই মেনে চলতেন তিনি।
সব সময় ফুটবল নিয়ে ভাবতেন। কোচিং করানোর সময় বিদেশি ফুটবল সাময়িকী পড়তেন। বিশ্ব ফুটবলে কোথায় কী হচ্ছে, নিয়ত খোঁজ রাখতেন। আর সেই প্রকরণ নিজের প্রশিক্ষণে আনার চেষ্টা করতেন। দলের ভালর জন্য তথাকথিত নামকরা ফুটবলারকে দিনের পর দিন রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেও দু’বার ভাবেননি। আবার যে ফুটবলারের মধ্যে প্রতিভা দেখেছেন, তাঁর পিঠে ভরসার হাত রেখেছেন। তুলে এনেছেন একের পর এক তরুণ বাঙালি ফুটবলার।
বাংলা ও দেশের হয়েও ট্রফি জিতেছেন সুভাষ। বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। ভারতের হয়ে এশিয়ান গেমসে (১৯৭০) ব্রোঞ্জ পদকজয়ী দলের সদস্য ছিলেন এই তেজিয়ান ফুটবলার।