দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের গ্রেপ্তারি। এবার এসএসসির প্রাক্তন দুই উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং অশোক সাহাকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআরে প্রথম নামই ছিল শান্তিপ্রসাদের। অশোকের নাম ছিল চারে।
সিবিআই সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে অসঙ্গতি মেলার পরই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন সিবিআই গোয়েন্দারা। বুধবার সকালেই শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং অশোক সাহার বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। দফায় দফায় জেরা করা হয় উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন দুই সদস্যকে।
অভিযোগ, দু’জনকে জেরাতেই অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এরপরই তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। আদালতের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত করছিল সিবিআই। কিন্তু এতদিন তারা কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। বুধবার একেবারে জোড়া গ্রেপ্তারি। কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত বাগ কমিটির রিপোর্টেও এসএসসির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ এবং এসএসসির প্রাক্তন সচিব অশোকের নাম ছিল।
সিবিআই সূত্রে খবর, এই দু’জন তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তথ্য গোপন করার অভিযোগও ছিল। এই কারণেই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হল। এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এই প্রথম গ্রেফতারি। শান্তিপ্রসাদ সিনহা ছিলেন এই এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির মাথায়। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে এর আগেই শান্তি প্রসাদ সিনহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাগ কমিটি। অতীতে ইডি এবং সিবিআই – দুই তদন্তকারী সংস্থাই শান্তিপ্রসাদ সিনহার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল। তাদের আয়-ব্যয়ের হিসেব থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন নথি হাতে এসেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হাতে। সেই সূত্র থেকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ জাগে এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তি প্রসাদ সিনহার একটি বড় ভূমিকা ছিল নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে।
জানা গিয়েছে, এদিন তাঁদের বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার বিকেলে তাঁদের গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য টিভি নাইন বাংলায় জানান, “এদের তো প্রত্যেকেরই গ্রেফতার হওয়া উচিত। এরা পরিকল্পনা করে টাকা তুলেছেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের গ্রেফতার হওয়া উচিত। সেটা যত দ্রুত হয়, তত তদন্তের কাজে সুবিধা হবে। এ এক গভীর চক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। এদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত।”
প্রসঙ্গত, এই দুই প্রাক্তন উপদেষ্টার গ্রেফতারি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এর আগেই নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ (ইডির দাবি অনুযায়ী) অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তবে এবার সিবিআই-ও গ্রেফতারির খাতা খুলল। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এন বাগের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে এই দুর্নীতিতে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক এস পি সিনহার একটি বড় ভূমিকা ছিল বলে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এরপর দফায় দফায় শান্তি প্রসাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কখনও নিজাম প্য়ালেসে কখনও শান্তি প্রসাদের বাড়িতে।
দুই জনের গ্রেফতারির বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সিবিআই-এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, “এই পুরো কমিটিটাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। সিবিআই কী করবে আমি জানি না। বাগ কমিটির রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা পড়েছে এবং প্রকাশ্যে এসেছে। সেটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাঁর আপ্ত সহায়ক এবং এই কমিটি… প্রত্যেকে শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিদের বঞ্চিত করার বিনিয়মে তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।”
প্রসঙ্গত, এদিন সন্ধেয় শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহার মেডিক্যাল করানো হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।