বুধবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন, রাত। তারপর শুক্রবার। শনিবার সকাল থেকে ফের কলকাতা সহ জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। গভীর নিম্নচাপের জেরেই এই বৃষ্টি বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর। একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। একাধিক জেলায় সেতু বা রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
নাগাড়়ে বৃষ্টি। তাতে বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। জলে ভেসে শনিবার রাতে আসানসোলের কল্যাণপুরে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।
এদিকে গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী-সহ জেলায় জেলায় একাধিক নদীর জলস্তর বেড়ে কার্যত ফুঁসতে শুরু করেছে। যার জেরে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদিয়া, হুগলি এবং বর্ধমানের একাধিক এলাকা ইতিমধ্যে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
তার ওপর শুক্রবার রাত থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিভিসি ও মাইথন থেকে সম্প্রতি ৬ হাজার কিউসেক করে জল ছাড়া হয়েছিল। শুক্রবার থেকে সেই জলই ছাড়ার কাজ শুরু করেছে দুর্গাপুর ব্যারেজ। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা জানা গেছে। সেক্ষেত্রে সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকায় নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে।
জানা গেছে, শনিবার আসানসোলের কল্যাণপুরে গাড়ুই সেতু জলমগ্ন ছিল। শনিবার রাতে চারচাকা নিয়ে ওই সেতু পারাপার করতে গিয়ে গাড়ি সমেত ভেসে যান চঞ্চল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। এদিন সকালে নদীর অদূরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। এদিকে ঝুমি নদীর জল বেড়ে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্যত বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ঝাড়গ্রামের সুবর্ণরেখার নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় সাঁকরাইল ও নয়াগ্রাম যাতায়াতের ফেয়ার ওয়েদার সেতু ভেসে গিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট দুটি এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দেরিতে বর্ষা আসায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এবারে বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি। তার অনেকটাই পূরণ করে দিয়েছে। উল্টে তৈরি হয়েছে বন্যার আশঙ্কা। এদিকে বাংলার আকাশে রয়েছে নিম্নচাপ। যার দাপটে আগামী কয়েকদিনও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপরে থাকা নিম্নচাপ শক্তিবাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে ক্রমশ বিহার উত্তরপ্রদেশের দিকে এগোচ্ছে। তারই সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখা ও পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখা।এই ত্রিফলার দাপটে শনিবারও কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা শোনাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ভারী বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গেও। উত্তাল রয়েছে সমুদ্রও, যে কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টা মৎস্যজীবীদেরও সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
শনিবার ভোর ৪ টে থেকে ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে কলকাতার একাধিক এলাকায়। শনিবার দিনভর কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া , হুগলি, নদিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। শনিবার বিকেলের পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। রবিবার থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমবে দক্ষিণবঙ্গে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির দু’এক জায়গায় হবে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে কলকাতা এবং শহরতলির অধিকাংশ রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। তবে শুক্রবার অনেক জায়গা থেকেই জল নেমে গিয়েছে। শুক্রবার দফায় দফায় বৃষ্টি হলেও শনিবার শহরের কোথাও জল জমা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনও সমস্যা নেই বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। রাস্তায় যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। কলকাতায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৪ ডিগ্রি কম।
শনিবার উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং কালিম্পং আলিপুরদুয়ার কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মালদহ ও দুই দিনাজপুরে। রবিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং কালিম্পং জেলাতে। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে উত্তরবঙ্গে। ওই দিন থেকে দার্জিলিং কালিম্পং আলিপুরদুয়ার কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলাতে অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমনকী পার্বত্য এলাকায় ধস নামার আশঙ্কাও করছে আবহাওয়া দফতর।
শনিবার দক্ষিণের সব জেলাতেই চলবে বৃষ্টি। তবে বিকেলের পর কমতে পারে। আর উত্তরবঙ্গে মঙ্গলবার অবধি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮০ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৯.৯ মিলিমিটার।প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ঝাড়খন্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, পঞ্জাব, ত্রিপুরা এবং ওড়িশাতে।