দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ‘নাথবতী অনাথবৎ’ হবে মঞ্চে।
শুধু তিনি আর থাকবেন না। আর কোনও নাটকেই দেখা যাবে না তাঁর দাপুটে অভিনয়। কোনও প্রতিবাদ মিছিলেই হাঁটতে দেখা যাবে না তাঁকে। চলে গেলেন শাঁওলি মিত্র। সকলের অগোচরে। এমনটাই ইচ্ছে ছিল নাট্যকারের।
মৃত্যুর পরে ফুলের ভার নয়! সরকারি কাগজে ইচ্ছাপত্র লিখেছিলেন শাঁওলি, বিদায় নিলেন বাবার পথেই
মৃত্যুর পরে দেহখানির প্রদর্শন যেন না হয়। ফুলের ভার যেন চেপে না বসে সদ্য মুক্তি পাওয়া শরীরে। সমারোহে, ভিড়ে যেন ভারাক্রান্ত না হয় শেষ যাত্রা। তা যেন হয় নিঃশব্দে, শান্তিতে, নিশ্চিন্তে। তার পরেই যেন মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় বাইরের দুনিয়ায়। এই ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছে। এ ইচ্ছের কথা রীতিমতো সরকারি স্ট্যাম্পপেপারে লিখেছিলেন তিনি, বছর দুয়েক আগেই। আজ তাঁর প্রয়াণের পরে অক্ষরে অক্ষরে মানা হল প্রতিটি কথাই।
সেই ইচ্ছেপত্র মেনেই রবিবার সন্ধেবেলা শেষকৃত্য সম্পন্ন হল তাঁর। এর পরই প্রকাশ করা হল মৃত্যুর খবর। বরাবর বাবার পথেই হেঁটেছেন শাঁওলি। নাটককেই জীবন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বাবার মতোই নাট্য পরিচালনায় হাত দিয়েছিলেন। বারবার সরব হয়েছিলেন বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে। শেষটাও একইভাবে হাঁটলেন বাবার মেয়ে। এই একই ইচ্ছে ছিল শাঁওলির বাবা শম্ভু মিত্রেরও। লিখে গিয়েছিলেন নিজের ইচ্ছে।
সেই ইচ্ছে মেনে লোকচক্ষুর আড়ালে বাবাকে দাহ করেছিলেন মেয়ে। এবার শাঁওলির ইচ্ছে মেনে তাঁকে সিরিটি শ্মশানে দাহ করা হল। সে সময় উপস্থিত ছিলেন মানস কন্যা অর্পিতা ঘোষ। শাঁওলি চেয়েছিলেন, ফুলের বোঝায় এই পৃথিবী যেন ছাড়তে না হয় তাঁকে। বরং শান্তিতে নেমে আসুক শেষ। হলও তাই। মৃত্যুকালে নাট্যকারের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
জানা গিয়েছে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। ‘ডাকঘর’, ‘পুতুলখেলা’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’–র মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। ২০০৯ সালে অভিনয়ের জন্য পদ্মশ্রী পান শাঁওলি। ২০০৩ সালে সঙ্গীত–নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান। ২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার পেয়েছন তিনি।
শাঁওলির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলা নাট্যজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং প্রখ্যাত মঞ্চশিল্পী শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাভিভূত বোধ করছি। প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র বাংলা অভিনয় জগতে মহীরুহ ছিলেন।’ এও জানিয়েছেন, সিঙ্গুর আন্দোলনে শাঁওলি কীভাবে তাঁর পাশে ছিলেন।