Shahjahan Sheikh Arrestedমিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার শাহজাহান শেখ জানালেন এডিজি , ‘বাংলায় আইনশৃঙ্খলা ফিরছে’বললেন, রাজ্যপাল

0
185

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক ৫৫ দিনের টালবাহানার অবসান। অবশেষে মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালির ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। দাবি পুলিশ সূত্রে। তাঁকে বসিরহাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আদালতের লকআপে রাখা হয়েছে তাঁকে। বৃহস্পতিবারই তাঁকে আদালতে হাজির করানো হবে। সকাল ৯টায় মিনাখাঁ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার।

বৃহস্পতিবার সুপ্রতিম বলেন, “সংবাদমাধ্যমে লাগাতার বলা হয়েছে পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবে শাহজাহানকে গ্রেফতার করছে না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা ঠিক নয়। এটা ভুল। এটা অপপ্রচার। আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। দিন দুয়েক আগে যখন মাননীয় উচ্চ আদালতের তরফে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয় যে গ্রেফতারির উপরে কোনও বিধিনিষেধ নেই, তখন আমরা জোরকদমে তল্লাশি শুরু করি। গত রাতে মিনাখাঁ থানার বামনপুকুর অঞ্চল থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করি।”

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, সন্দেশখালিতে অনেক ধরনের মানুষ আসছেন। তাঁদের কাছে পুলিশের তরফে তাঁর আর্জি, “এমন কিছু করবেন না, যাতে এলাকায় বিভেদ সৃষ্টি হয়।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “কিছু কিছু নেতা, বিশেষ করে বিরোধী দলের কেউ কেউ এমন কথা বলছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছেন, যা আমাদের কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এমন কিছু না করলেই ভাল হয়।”

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে আগেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার না করলে  সরকারকে ‘ফল ভুগতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। অবসেষে শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার পরে মুখে হাসি ফিরল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আলো থাকবেই। এটাই গণতন্ত্র। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরবে বাংলায়।”

শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা নেই, সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরই তৃণমূলের তরফে থেকে দাবি করা হয়, আগামী ৭ দিনের মধ্যে গ্রেফতার হবে সন্দেশখালি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। শাহজাহানকে দ্রুত গ্রেফতার করতে রাজ্য সরকারকে চিঠিও দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই ডেটলাইন মিলে গেছে। বুধবার গভীর রাতেই সন্দেশখালি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ শাহজাহানকে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, “আমার খুব ভাল লাগছে। সবকিছু ভালই হল। বাংলায় এবার ভাল জিনিসই হবে।”

শাহজাহানের গ্রেফতারি ইস্যু নিয়ে চাপানউতোর চলছে বিগত কয়েকদিন ধরেই। রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, আদালতের স্থগিতাদেশের কারণেই গ্রেফতার করা যাচ্ছে না শাহজাহানকে। কিন্তু সোমবার এই তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে দেয় আদালত। জানানো হয়, তাঁর গ্রেফতারিতে কোনওদিন স্থগিতাদেশ ছিল না। পুলিশ চাইলেই গ্রেফতার করতে পারে শাহজাহানকে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এই প্রেক্ষিতেই রাজ্যকে চিঠি দেন। তিনি জানান, কালপ্রিটকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতার করতে হবে।

সরকারকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল বোস লিখেছিলেন, প্রশাসন যদি শাহজাহানকে এবারও ধরতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। এছাড়া সন্দেশখালি থেকে নতুন করে যে অভিযোগ আসছে তার তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। তদন্তের রিপোর্ট রাজভবনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। 

সূত্রের খবর, গতকাল দুপুরের পর থেকে শেখ শাহজাহানের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করেই শুরু হয় তল্লাশি। রাতের দিকে  বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এলাকা। তারপর গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাঁকে বসিরহাট আদালতের কোর্ট লকআপে নিয়ে আসা হয়েছে। আজ দুপুরে শাহজাহানকে বসিরহাট মহকুমা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে পেশ করা হবে।

গত রবিবার প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “কোথাও কোনও সংশয় রাখবেন না, যে শাহজাহানকে আড়াল করা হচ্ছ। শাহজাহানকে যদি কেউ আড়াল করে, তাহলে সেটা জুডিশিয়ারি ডিপার্টমেন্ট।”  এরপর তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যেই গ্রেফতার হবেন শাহজাহান। দল সাত দিনের ডেটলাইন দিয়েছিল, তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা।

শাহজাহানকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে গত বুধবারই বড় দাবি করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।  তাঁর দাবি ছিল, মঙ্গলবার রাতেই নাকি পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ফেলেছে শাহজাহানকে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিডলম্যান তথা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন এক প্রভাবশালী। তাঁর আরও দাবি ছিল, শাহজাহান পুলিশ ও সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করেছে। পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন তার যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে, এই আশ্বাস পাওয়ার পরই শাহজাহান পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। তাকে জেলে পাঁচতারা সুবিধা দেওয়া হবে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। যাতে জেলে বসে নিচুতলায় অপারেট করতে পারে। শুভেন্দুর এও দাবি, এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের একটি বেড শাহজাহানের জন্য খালি রাখা হবে, যাতে সে সেখানে কিছু সময় কাটাতে পারে।

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছিল সন্দেশখালি। শেখ শাহজাহান কবে গ্রেফতার হবেন, এই প্রশ্নই ছিল লোকজনের মুখে মুখে। এই প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, সিবিআই, ইডি বা রাজ্য পুলিশ, যে কেউ গ্রেফতার করতে পারবে সন্দেশখালির কুখ্যাত নেতাকে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভোরে সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’কে গ্রেফতার করল পুলিশ। 

২০২০ সাল থেকে ২০২৩-এর মধ্যে শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ১৬টি জমি দখল, ১৩টি খুন অথবা খুনের চেষ্টা, ৫টি ধর্ষণ এবং ১৭টি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু, একটি অভিযোগেরও এফআইআর হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিল ইডি। সেই সময়েই স্থানীয়দের হাতে মার খেয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকদের। সেদিন বাংলা এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল। অভিযোগ ওঠে. শেখ শাহজাহানের বাড়ির দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করতেই হাজার হাজার মহিলা পুরুষ  ইডি-র দিকে তেড়ে এসেছিলেন লাঠি, বাঁশ, লোহার রড হাতে। সেদিন ইডি আধিকারিকদের মার খেতে হয়েছিল। মাথা ফেটেছিল দুই ইডি আধিকারিকের। তখন থেকেই শেখ শাহাজাহান বেপাত্তা।

তার পর শাহজাহান অনুগামীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামের সন্দেশখালির একাংশ বাসিন্দা। সংগঠিত হন গ্রামের মহিলারা। নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। কার্যত গণরোষের মুখেই শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ দুই নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Previous articleCentral force in West Bengal ১ মার্চ রাজ্যের সব পুলিশ জেলাতেই যাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, জানিয়ে দিল কমিশন
Next articleSandeshkhali: শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারির পর উৎসব সন্দেশখালিতে, ফাটছে বাজি, উঠল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ,৪৯টি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here