দেশের সময় ,কলকাতা : আদালত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর শাহজাহানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, এ নিয়ে চলছিল জল্পনা। অবশেষে তৃণমূলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহানকে নিয়ে ভবানী ভবনে ঢুকল রাজ্য পুলিশ। দুপুর ১২ টা ৩৫ মিনিট নাগাদ শাহজাহানকে নিয়ে সিআইডি-র দফতরে ঢোকেন পুলিশ আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির তদন্তভার নেয় সিআইডি। এরপরই এদিন বসিরহাট আদালত থেকে সরাসরি ধৃত তৃণমূল নেতাকে ভবানী ভবনে নিয়ে আসা হয়। একপ্রকার গ্রিন করিডর করে শাহজাহানকে নিয়ে সিবিআই-র দফতরে পৌঁছয় পুলিশ। কার্যত সংবাদমাধ্যমের চোখে ধুলো দিয়েই সন্দেশখালির দাপুটে নেতাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সেসময় বাসন্তী হাইওয়ে সহ গোটা রাস্তা যানবাহন শূন্য করে দেওয়া হয়েছিল।
আদালত থেকে বের করে কোথায় শাহজাহানকে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে পুলিশ। কোথায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে মরিয়া সংবাদমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিয়েই শাহজাহানকে নিয়ে বেরিয়ে যায় পুলিশের একটি গাড়ি। তারপরেই কোন থানায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। এরপর খানিকক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ধৃত তৃণমূল নেতাকে ভবানীভবনে নিয়ে ঢুকছে পুলিশ বাহিনী। আগামী ১০ দিন তাঁকে সেখানেই রাখা হবে। দফায় দফায় তাঁকে জেরা করে সন্দেশখালিকাণ্ডের তদন্ত চালাবে রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
৫৬ দিন পর গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান। পুলিশ-ইডির চোখে ফাঁকি দিয়ে এতদিন ‘নিখোঁজ’ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করার পর তাঁকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় বসিরহাট মহকুমা আদালত। এরপর শাহজাহান নিয়ে আদালত চত্বর থেকে উধাও হয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ির কনভয়। নীলবাতি লাগানো সেই একটি গাড়িতে দুই পুলিশ আফিসার শাহজাহানকে নিয়ে মাঝের আসনে বসেছিলেন।
সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহানের নিঁখোঁজ হওয়ার পিছনেও যেমন রহস্য ছিল, ঠিক তেমনই তাঁর গ্রেফতারির পরও পরতে পরতে যেন রোমাঞ্চ। যদিও এর পিছনে কারণ রয়েছে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। আসলে শাহজাহানকে নিয়ে সন্দেশখালিবাসীর ক্ষোভ ছিলই। তাই নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতেই গোপনীয়তা রাখা হয়েছিল। পরিকল্পনা মাফিক তাঁকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে পুলিশ নির্বিঘ্নে জেরা করতে চেয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও কারণ হতে পারে, শাহজাহানকে কোথায় রাখা হচ্ছে, তা জানতে দিতে চাইছে না পুলিশ। প্রথমত, শাহজাহানকে ঘিরে জনরোষের আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শাহজাহানকে সামলাতে বসিরহাট আদালতে যেমন বড় সংখ্যক পুলিশবাহিনী এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল, ঠিক ততটা বা তারও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে পুলিশি হেফাজতে-রাখা শাহাজাহানকে নিয়েও। শাহজাহানকে নিয়ে সন্দেশখালিতে এখনও অশান্তি চলছে। সেই আবহে আরও একটি জায়গায় যদি বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করতে হয়, তবে সন্দেশখালি এলাকা রক্ষীহীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যার অবকাশে সেখানে আবার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, শাহজাহানকে স্থানীয় কোনও থানায় রাখা হলে সেখানে সংবাদমাধ্যম নিয়মিত উপস্থিত থাকবে। শাহজাহানকে কোথায় কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ঘটনার পুনর্নির্মাণ হচ্ছে কি না, কারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, বাড়ির কেউ দেখা করতে আসছেন কি না, সে সব কিছু সর্বসমক্ষে ঘটবে। মূলত সেই কারণেই শাহজাহানকে নিয়ে এই ‘গোপনীয়তা’।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে যান ইডির আধিকারিকরা। অভিযোগ, শাহজাহানের নির্দেশেই একদল গ্রামবাসী ইডির আধিকারিকের উপরে হামলা করে। ভাঙচুর করা হয় ইডির গাড়ি। এরপর থেকেই খোঁজা হচ্ছিল শেখ শাহজাহানকে। কিন্তু বিগত ৫৫ দিন ধরে নাগাল মেলেনি তাঁর। গতকাল, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মিনাঁখা থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। পুলিশের তরফে জানানো হয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩০৭, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৩, ৩৭৯, ৫০৬, ৩৪১, ৩৫৩, ৩২৩, ৪২৭, ৫০৬, এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি আইনের ৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।