দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে আজ, মঙ্গলবার সারা পশ্চিমবঙ্গে খুলল স্কুল। খুলছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।
সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল , সিগনেটডে স্কুল,ক্যালকাটা গালর্স, ডন বস্কো, ডিপিএস রুবি পার্ক, ফিউচার ফাউন্ডেশনের মতো বহু স্কুলে আজ শুধু নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হল। সাউথ পয়েন্টে ক্লাস শুরু হল শুধু দশমের।
তবে আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, নবম ও একাদশের ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। দশম ও দ্বাদশের ক্লাস সকাল ১১টায় শুরু হবে। ক্লাস শুরুর আধঘণ্টা আগে স্কুলে হাজির হতে হবে পড়ুয়াদের। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পাশাপাশি আজ খুলল বেসরকারি স্কুলও। তবে, সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল , সিগনেটডে স্কুল ক্যালকাটা গালর্স, ডন বস্কো, ডিপিএস রুবি পার্ক, ফিউচার ফাউন্ডেশনের মতো বহু স্কুলে আজ শুধু নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হল। সাউথ পয়েন্টে ক্লাস শুরু হল শুধু দশমের। যদিও লা মার্টিনিয়ার, বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের মতো স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্তই ক্লাস হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশ্বাস, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য আগে, তাই স্কুলে হাজিরার ব্যাপারে জোরাজুরি করা হবে না। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমণের আশঙ্কায় বহু অভিভাবক ছেলেমেয়েদের স্কুলে না-ও পাঠাতে পারেন। এই অবস্থায় স্কুল খোলা নিয়ে উৎসাহ যতটা, উৎকণ্ঠা তার থেকে কম কিছু নয়। সেই জন্যই অনলাইন-পাঠ চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিমত।
আবার কঠোর সত্য হল, রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে একসঙ্গে অফলাইন ও অনলাইন দুই পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামোই নেই। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন সাংবাদিকদেরকে জানান, “একই সঙ্গে অনলাইন ও অফলাইন চালানোর সুযোগ কিছু বেসরকারি স্কুল এবং শহরাঞ্চলের কিছু সরকারি স্কুলে থাকলেও বেশির ভাগ স্কুলেই নেই। সে-ক্ষেত্রে পঠনপাঠনে অগ্রগতির প্রশ্নে স্কুলে উপস্থিত পড়ুয়াদের সঙ্গে অনুপস্থিতদের ফারাক একটা থেকেই যাবে। যারা আসবে না, তাদের অনলাইন ক্লাস নিতে হবে এমন কোনও নির্দেশিকাও শিক্ষা দফতর থেকে এখনও পর্যন্ত আসেনি।”
অন্যদিকে, কোভিড বিধি যথাযথ ভাবে মেনে চলার মতো আর্থিক সংস্থান সব স্কুলের রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের একাংশের সংশয় আছে। তাঁদের প্রশ্ন, যে-ভাবে নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশন বা জীবাণুনাশের কথা বলা হচ্ছে, শৌচালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হচ্ছে, তার জন্য পর্যাপ্ত টাকা ক’টি স্কুলের তহবিলে আছে?
প্রধান শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, পড়ুয়াদের জন্য অ্যাক্টিভিটি টাস্কের ফোটোকপি থেকে শুরু করে সব কাজ চলে স্কুলের কম্পোজিট ফান্ডের টাকায়। নানা খাতে খরচ করতে করতে অনেক স্কুলেই সেই তহবিল তলানিতে পৌঁছেছে। অনেক জেলার স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা এই প্রসঙ্গে বলেন, “রোজ স্কুল জীবাণুমুক্ত করার টাকা তাঁদের স্কুলেরই কম্পোজিট ফান্ডে নেই।
বহু স্কুলে সাফাইকর্মী থেকে স্কুলের শিক্ষাকর্মীর পদ ফাঁকা। এই অবস্থায় নিয়মিত জীবাণুনাশ বা রোজ স্কুলের গেটে পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার কাজ হবে কী ভাবে?” কোভিড বিধি মেনে ক্লাস করার জন্য প্রতিটি শ্রেণির সেকশন ভেঙে পৃথক পৃথক শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তার জন্য পর্যাপ্ত ঘর এবং যথেষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা রাজ্যের ক’টি স্কুলে আছে, এই প্রশ্নটাও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
পরিকাঠামোর উন্নয়নে শিক্ষা দফতর যে-সব স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছিল, সেই ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও টাকা পৌঁছয়নি বলে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশের অভিযোগ। “দক্ষিণ ২৪ পরগনায়
“পরপর দুই ঘূর্ণিঝড়ে নামখানা ব্লকের স্কুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। পরিকাঠামোর উন্নয়নে শিক্ষা দফতর ৬৬,৪৩৮ টাকা মঞ্জুর ও করেছিল। কিন্তু এখনও তা মেলেনি। তা ছাড়া এটা পর্যাপ্ত অর্থও নয় বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলবাড়িতে কী ভাবে পড়ুয়াদের বসাব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছেন বলেও জানান শিক্ষকেরা।” স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, এই এলাকায় বেশ কিছু স্কুলের পুরনো বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। অথচ সেখানেই নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস হয়।
হাজারো প্রশ্ন এবং দুশ্চিন্তার মধ্যেই অবশ্য স্কুল খোলার তোড়জোড় চলছে রাজ্য জুড়ে। শিক্ষা দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলের গেটে তিন জনকে অবশ্যই মোতায়েন করতে হবে। পড়ুয়ারা মাস্ক পরে এসেছে কি না, জীবাণুনাশের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেগুলো দেখার পাশাপাশি মাপতে হবে পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে এত দিন পরে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ফিরছে। তাই তাদের পেন বা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকেরা আজ বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যাবেন।