দেশের সময় , কলকাতা: আরজি করের কর্তব্যরত চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশ। দিকে দিকে আন্দোলন-প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তারমাঝেই এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। আরজি করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। মঙ্গলবারের শুনানিতে সাফ জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার কিছু পরেই শুরু হয় শুনানি। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে ঘটনার শুনানি ছিল এদিন।
‘আরজি করের ঘটনার নৃশংসতা গোটা দেশেকে নাড়িয়ে দিয়েছে।’মঙ্গলবার একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘এই যৌন নির্যাতনের ঘটনা মানুষের চেতনাকে আঘাত করেছে। নিহত নির্যাতিতার নাম এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে।’ দেশ কি ফের কোনও ধর্ষণের জন্য অপেক্ষা করবে? প্রশ্ন তোলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
আরজি কর কাণ্ডে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের প্রশ্ন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা যুক্ত হচ্ছেন। আমরা আর কোনও ধর্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে পারব না! পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন।’ বর্তমানে যে বন্দোবস্ত রয়েছে তা কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলেও পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির।
গত ৯ অগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে উদ্ধার হয় তরুণী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু হয়। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে গোটা দেশ। নিহত নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার শুনানিতে এ দিন দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘এই যৌন হেনস্থার নৃশংসতা মানুষের চেতনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।’ প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে কি না।
জবাবে রাজ্য জানায়, তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান রাজ্যের আইনজীবী। আগামী ২২ অগস্ট CBI-কে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত। হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়েও ওই দিন রিপোর্ট দেবে রাজ্য। আগামী ২৩ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
এদিন আরজি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা হাসপাতালে অবস্থানে বসেই সুপ্রিম-শুনানি দেখেন। শীর্ষ আদালত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শেষ কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করেছেন। যদিও সুপ্রিম-শুনানির পর আরজি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কর্মবিরতি তুলে নেওয়ায় সহ সকল সিদ্ধনাত নেওয়া হবে জিবি মিটিং-এর পর। অন্যদিকে, ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশগুলিকে স্বাগত জানিয়েছে।