দেশের সময় , কলকাতা : স্বাস্থ্য কর্তাদের পদত্যাগ-সহ ৫ দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন আন্দোলরত চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যকর্তার ই-মেল বার্তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কৃতজ্ঞতা জানাতে রাতেই সেখানে পৌঁছে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা বললেন, “একটা মেয়ে হারিয়ে আমি আজ অনেক ছেলে মেয়ে পেয়েছি। সবাই যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, বিচারের দাবিতে লড়ছেন তাতে আশা করছি বিচার আমরা পাবই। প্রশাসনের সুবুদ্ধি হোক।”
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে। সারা রাত চলবে অবস্থান বিক্ষোভ।
এ বিষয়ে কি বললেন বিরোধী দল নেতা দেখুন ভিডিও
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে বিক্ষোভে এসে নির্যাতিতার মা বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা আজ রাস্তায়, তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি, ছুটে এসেছি এখানে। প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলছেন, আমার কাছে এটাই উৎসব।”
আরজি কর কাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এমনই ৫ দফা দাবি তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় তাঁরা। মঙ্গলবার করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযান করেন। বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে সরেননি তাঁরা। আর এই খবর পেয়ে রাতেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছে গেলেন তিলোত্তমার বাবা-মা।
গত ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে ‘তিলোত্তমা’-র দেহ উদ্ধার হয়। আন্দোলনে নামেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলে। কিন্তু, জুনিয়র চিকিৎসকরা স্পষ্ট করে দেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পাঁচ দাবির মধ্যে রয়েছে আরজি কর কাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এদিন স্বাস্থ্য সচিব আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেল পাঠিয়ে নবান্নে বৈঠকে আসার আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানানো হয়। আলোচনার পথ খোলা রাখলেও এদিন নবান্নে যাননি জুনিয়র ডাক্তাররা।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকেও সরে যাননি আন্দোলনকারীরা। রাতেও সেখানে চলছে অবস্থান। সেই খবর পেয়েই রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে চলে আসেন তিলোত্তমার বাবা-মা ও পরিজনরা। তিলোত্তমার কাকিমা বলেন, ডাক্তারদের সুরক্ষা দিতে যাঁরা পারছেন না, তাঁরা কী করে কাজে ফেরার কথা বলেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসবে ফেরার মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন তিনি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘যাঁর (স্বাস্থ্যসচিব) বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিই মেল করেছেন আমাদের। এটা অপমানজনক। আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের দাবি মেটেনি। তাই যাব না।’’
আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘‘ন্যায় বিচার পাচ্ছি না, উৎসবে আর ফিরছি না।’’
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচটি দাবি-সহ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফার দাবি করেছিলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখলাম, স্বাস্থ্যসচিবের অ্যাকাউন্ট থেকে মেল করা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে, আমাদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল নবান্নে যেতে পারে। আমরা চাইছিলাম, সরকার সদর্থক বার্তা দিক। কিন্তু স্বাস্থ্যসচিবের থেকে যে মেল এল, তা সদর্থক বলে দেখছি না।’’
জুনিয়র চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘এর আগে লালবাজারে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের হাতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে তিনি ইস্তফা দেবেন। কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন তিনি ইস্তফা নেননি, কাজ চালাতে অসুবিধা হবে। এ বার যে ভাষায় মেল এল, স্বাস্থ্যসচিবের অ্যাকাউন্ট থেকে এই মেল আসা অপমানজনক।’’
আন্দোলনকারীরা জানান, প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা ‘অপমানজনক’। তাঁরা বলেন, ‘‘এর পরেও রাজ্য সরকার যদি সদর্থক বার্তা দেয়, আমাদের পাঁচটা দাবি মেটানো হবে, সমস্যার সমাধান হবে বলে বার্তা পাই, তা হলে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ভেবে দেখতে পারি।’’
আন্দোলনকারীদের দাবি, নবান্ন থেকে সরকারি ভাবে মেল আসেনি। এসেছে স্বাস্থ্য সচিবের থেকে। বৈঠকের সদর্থক ইচ্ছা থাকলে এ ভাবে মেল করা হত না বলে দাবি। তাঁদের আরও দাবি, ‘‘আলোচনার পথ সব সময় খোলা। আন্দোলনের ৩২ দিনে পর আমরা স্বাস্থ্য ভবনে বসে রয়েছি, তখন এ ভাবে মেল করে ডাকা হয়েছে, যাতে আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট হয়েছে।’’ তারা এ-ও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে গেলে ১০ জনের দল যাবে না। সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদল যাবে।