দেশের সময়, কলকাতা : রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার আরও এক। বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে গ্রেফতার করেছেএনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তে অসহযোগিতা এবং বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যবসায়ীকে।
ইডি সূত্রে খবর, তল্লাশি চলাকালীন বিপুল পরিমাণ হাওয়ালা সংক্রান্ত নথি উদ্ধার হয়েছে বিশ্বজিতের বাড়ি থেকে।
কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানতে পেরেছে, বিশ্বজিৎ দাস বনগাঁর শিমুলতলার বাসিন্দা। শঙ্কর আঢ্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্বজিতের নাম উঠে আসে তাঁদের কাছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় যে কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে সে সংক্রান্ত বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই অভিযান করেছিল ইডি।
কোন টাকা কোথায় ও কীভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও মঙ্গলবারের অভিযান শুধু রেশন দুর্নীতির তদন্তের জন্য ছিল না, স্টক এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত তদন্তের জন্যও ছিল। ৮ থেকে ১০টি টিম মিলিতভাবে এই অভিযান করে।
রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় রাজ্যের চতুর্থ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল ইডি। বিশ্বজিৎ দাস বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং ওই একই মামলায় ধৃত শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকুর ঘনিষ্ঠ বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।
রেশন দুর্নীতি মামলায় এর আগে গ্রেফতার হয়েছেন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। ইডি গ্রেফতার করেছে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে। তাঁর সূত্রে ধরে ধরা হয় বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকুকে। এ বার শঙ্করের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে ধরল ইডি। বিশ্বজিৎ দাস নামে ওই ব্যক্তির একাধিক ব্যবসা রয়েছে বলে খবর।
মঙ্গলবার ইডির অভিযান হয় বিধাননগরের সল্টলেক, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং বাগুইআটিতে। ওই ব্যবসায়ীর একাধিক ফ্ল্যাটে যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ইডির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সল্টলেকে বিশ্বজিতের বাড়িতে যখন তল্লাশি চলে, তখন ব্যবসায়ী বাড়িতে ছিলেন না।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তল্লাশি চালাচ্ছিল ইডি। সেই মতো তাঁরা গতকাল পৌঁছন বিশ্বজিতের সল্টলেকের আইবি ব্লক-এর বাড়িতে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে তল্লাশি অভিযান। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বিশ্বজিতের বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসা রয়েছে, সোনার ব্যবসা রয়েছে,এছাড়াও এক্সপোর্ট ইমপোর্ট সংস্থা রয়েছে। ইডির সন্দেহ এই সংস্থার মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণ রেশন দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে।
ইডি সূত্রে খবর, হাওয়ালা সংক্রান্ত প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে।
জানা গিয়েছে, যে সময় তল্লাশি চলছিল সেই সময় এই ব্যবসায়ী বাড়িতে ছিলেন না। বিমান বন্দর থেকে কার্যত তাঁকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর গ্রেফতার হন তিনি।
সূত্রের খবর, বুধবারই বিশ্বজিৎকে তোলা হবে আদালতে।
গত ৫ জানুয়ারি বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে তারা তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। প্রায় ১৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ফরেক্স বা বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসা বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধানের। তাঁর এবং তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের নামে ৯০টির বেশি ফরেক্স সংস্থা রয়েছে। ইডি আদালতে জানিয়েছে, ওই সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন করেছেন শঙ্কর। তার মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের মন্ত্রী তথা রেশন মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। এর পরেই দুবাইতে শঙ্করের একটি সংস্থার খোঁজ পায় ইডি।
এখন তদন্তকারীদের সূত্রে কবর, বিশ্বজিৎও শঙ্করের মতো ফরেক্স বা বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সঙ্গে রেশন মামলার বেশ কিছু যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।