দেশের সময় , ওয়েবডেস্কঃ রবিবার থেকেই অবরুদ্ধ অযোধ্যা। বলাইযায় একপ্রকার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে পড়েছেন অযোধ্যাবাসী।
নবনির্মিত শহর চলে যাবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ভিভিআইপি অতিথিদের দখলে। ঘরবন্দি অযোধ্যাবাসীদের নিতান্তই বেরোতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে সঙ্গে রাখতে হবে আধার কার্ড। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব রকমের যান চলাচলও। আগত ভিভিআইপিদের জন্য বিশেষ কার স্টিকার বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণ বহিরাগত রামভক্তদেরও আগামী দু”দিন হোটেল বা ধর্মশালার চৌহদ্দিতেই বন্দি থাকতে হবে। আর সাধারণ সাধুসন্তদের থাকতে হবে বিশাল বিশাল তাঁবুতে। বন্দি তাঁরাও। তাঁবুতেই অষ্টপ্রহর ধরে চলবে ভজন-কীর্তন-রামকথা। বসানো হয়েছে বিরাট এলইডি স্ক্রিন। রামমন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও সওয়া চার ফুট উঁচু রাম-মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান তাঁদের ওই তাঁবুতে বসেই দেখতে হবে।
সাংবাদিকদের ওপরেও বিধিনিষেধের ঘেরাটোপ। ঘোরাফেরা করতে হলে প্রয়োজন মিডিয়া পাস। তাও সেই পাস নিয়েও যত্রতত্র যাওয়া যাবে না। হোটেল থেকে লতা মঙ্গেশকর চকের অদূরে রামকথা সংগ্রহশালার মিডিয়া সেন্টারের মধ্যেই তাঁদের ঘোরাফেরা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এদিক-ওদিক উঁকিঝুঁকি মারার কাজ একেবারেই বন্ধ।
রাজপথ থেকে অলিগলি, সর্বত্র মোতায়েন একে৪৭- কার্বাইন- ইনসাস রাইফেলে সুসজ্জিত সিআরপিএফ ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। রয়েছে র্যাফ। আনা হয়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড তথা ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডোর জওয়ানদেরও। এসেছে মাইন-প্রতিরোধী গাড়ি। যার ওপরে স্নাইপার রাইফেল হাতে রয়েছে অতন্দ্র প্রহরা।
ইতিমধ্যে অযোধ্যা বিমানবন্দরের নাম বদল হয়েছে। ছিল মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। হয়েছে মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে অযোধ্যা আসার সাত-আট কিলোমিটার পথের দু”পাশ সেজে উঠেছে মালায়, আলোয়। আর রয়েছেন মোদী ও যোগী। সঙ্গে অবশ্য রামলালা কিংবা রাজারাম। তবে মোদী বড়, ছোট যোগী। বড় বড় হোর্ডিংয়ে শুধুই মোদী, শুধুই যোগী।
রবিবারই অযোধ্যায় এসে পৌঁছানোর কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। বিজেপির বিশেষ চার্টার্ড বিমানে আসবেন লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশি। সেই বিমানেই আসছেন বর্তমান বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ এক ঝাঁক মন্ত্রী। আজ রবিবার ও আগামিকাল সকালে একে একে এসে পড়বেন বাকি সুপার-ভিভিআইপি অতিথিরাও। মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি, অমিতাভ বচ্চন-সহ বলিউডের তারকারা। আসছেন শচীন তেন্ডুলকার-সহ ক্রীড়াজগতের নক্ষত্ররা। ফলে সাধারণের জন্য সব রাস্তাই থাকবে বন্ধ।
অন্য দিকে, হনুমানগড়ির মন্দিরে কাতারে কাতারে ভিড় করছেন বহিরাগত ভক্তরা। অলিগলি, রাজপথের ধারে ধারে চলছে ভাণ্ডারা। গিয়ে দাঁড়ালেই পাত পেতে বসিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। পুরি, সবজি, হালুয়া, লাড্ডু। আয়োজনে কোনও ত্রুটি নেই।
রাত পোহালেই অযোধ্যায় শুরু ‘মহোৎসব’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন। তাঁর হাত দিয়ে রামলালার বিগ্রহে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হবে। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঢালাও আয়োজন করা হয়েছে অযোধ্যায়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অন্তত ৮০০০ মানুষ উদ্বোধনের সময়ে অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। যাবেন তারকা অতিথিরাও। ইতিমধ্যে অনেকে পৌঁছেও গিয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে অযোধ্যায় পৌঁছে যাওয়ার কথা মোদীর। তার পর সারা দিন ধরে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। রামমন্দির উদ্বোধনের পর মোদী অযোধ্যায় একটি জনসভাও করবেন।
সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে অযোধ্যার বাল্মীকি বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে অযোধ্যার হেলিপ্যাডে পৌঁছবেন ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। ১০টা ৫৫ মিনিটে রামমন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১২টার পরে শুরু হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মোদী রামমন্দিরের ভিতরেই থাকবেন। তবে ওই সময়ে তিনি কী করবেন, তা জানানো হয়নি।
রামলালার বিগ্রহে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র আচার-অনুষ্ঠান শুরু হবে ১২টা ৫ মিনিটে। টানা ৫০ মিনিট ধরে অনুষ্ঠান চলবে। ১২টা ৫৫ মিনিটে সব আচার-অনুষ্ঠান সেরে উদ্বোধনস্থল ছেড়ে বেরোবেন প্রধানমন্ত্রী।
রামমন্দিরের কাছেই মোদীর জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর ১টার মধ্যে তিনি সেখানে পৌঁছে যাবেন। ২টো পর্যন্ত চলবে সভা। জনগণের উদ্দেশে সেই সভা থেকেই প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। এর পর অযোধ্যার গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান কুবের টিলায় যাওয়ার কথা মোদীর।
হিন্দু ধর্মে এই কুবের টিলার গুরুত্ব অপরিসীম। অযোধ্যার ইতিহাস বলে, এখানে ধনসম্পদের দেবতা কুবের পায়ের ধুলো দিয়েছিলেন। সরযূ নদীর তীরে রামের জন্মভূমির অদূরেই তিনি স্থাপন করেছিলেন এক শিবলিঙ্গ। শিবপুজোও করেছিলেন। সোমবার বিকেলে ওই পবিত্র কুবের টিলা দর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে। তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলবে মঙ্গলবার থেকে। সোমবার আমন্ত্রিত ছাড়া সাধারণ মানুষ মন্দিরে ঢুকতে পারবেন না। মঙ্গলবার থেকে সারা দিনে দু’বার রামমন্দিরের দরজা খোলা হবে সাধারণের জন্য। প্রথম বার দরজা খুলবে সকাল ৭টায়। সে সময়ে পুণ্যার্থীরা মন্দিরে ঢুকতে এবং পুজো দিতে পারবেন। সাড়ে ১১টা নাগাদ আবার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আড়াই ঘণ্টার বিরতির পর আবার দুপুর ২টো থেকে দর্শনার্থীরা রামমন্দিরের ভিতর প্রবেশ করতে পারবেন। দরজা বন্ধ হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
সারা দিনে মোট তিন বার রামমন্দিরে আরতি হবে। ভোরবেলা প্রথম আরতির সময় সাড়ে ৬টা। সকালের এই আরতিকে বলা হচ্ছে ‘জাগরণ আরতি’। এর পর দুপুর ১২টা থেকে রামমন্দিরে হবে ‘ভোগ আরতি’। শেষে ‘সন্ধ্যারতি’ হবে ৭টা নাগাদ।
শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের তরফে জানানো হয়েছে, দর্শনার্থীরা আরতি দিতে চাইলে তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট আগে মন্দিরের ক্যাম্প অফিসে পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হতে হবে। সেখান থেকে আরতি দেওয়ার পাস সংগ্রহ করার পর মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসবের মেজাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সোমবার এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন রাজ্যেও রামমন্দির উদ্বোধনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে সোমবার পূর্ণ দিবস ছুটি। কংগ্রেস শাসিত হিমাচলও রবিবার পূর্ণ দিবস ছুটির কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া, রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, সিকিম এবং অসমে সোমবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।