
রক্তকরবীর অধ্যাপকের ভূমিকায় থিয়েটারের মঞ্চে বেশ কয়েকবছর ধরেই অভিনয় করছি। শ্রদ্ধেয় চিত্র ও নাট্য নির্মাতা গৌতম হালদার প্রায় জোর করেই আমাকে অধ্যাপকের চরিত্রটিতে অভিনয় করান। রক্তকরবী নাটকের ভাবনার গভীরতা উনি আমাকে প্রায় বর্ণ পরিচয় শেখানোর মত বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু গৌতমদা চলে যাবার পর রক্তকরবীকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিলো।
যক্ষপুরীর অচলায়তন ভাঙার মতই নন্দিনী অর্থাৎ চৈতিই মৌনতা ভাঙলো। ওর সঙ্গে রক্তকরবীর একটা আত্মার সম্পর্ক। দীর্ঘদিন ধরে চৈতি নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করে আসছে। ওই একদিন ফোন করে বললো, অশোকদা, “রক্তকরবী করবে ?”
বললাম, “করা যায়।…..ভাবছিস কিছু ?”

সেই ভাবনার বাস্তবায়ন রূপে চৈতির হাত ধরেই নতুন আঙ্গিকে রক্তকরবীর প্রথম শো মঞ্চস্থ হবে আগামী ৫ই এপ্রিল একাডেমিতে দুপুর ২.৩০ মিনিটে। এবারে রাজার ভূমিকায় দেখা যাবে প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী দেবেশ রায়চৌধুরীকে, সঙ্গীতের দায়িত্বে রয়েছে আমাদের বাংলার এই সময়ের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। শেষ মুহূর্তের মহড়া চলছে জোড়তোড়।
আমি এর আগেও বহুবার লিখেছি, গৌতমদা, চৈতি এমনকি রক্তকরবীর সহ অভিনেতাদের আন্তরিক সহযোগিতায় থিয়েটারের লোক না হয়েও এই নাটকটি করার সাহস পেয়েছি। এই প্রসঙ্গে আমার স্ত্রী নিবেদিতার একটা কথা মনে পরলে খুবই হাসি পায়। একবার রক্তকরবীর কোনো একটি শো শেষে ব্রাত্য বসু ও অন্যান্য অনেকেই আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করছিলো। নিবেদিতা ওদের থামিয়ে বলে ওঠে, “বাস্তবে তো লেখাপড়ার ধার দিয়ে যায়নি। এখন বুড়ো বয়সে অধ্যাপক সেজে মঞ্চে দাপাদাপি করছে।”
গৌতমদার জন্যই বুড়ো বয়সই সই কিন্তু রক্তকরবীর মত একটা ঐতিহ্যকে ছুঁয়ে যাবার গৌরব আমি অর্জন করেছি। রক্তকরবীর রিহার্সাল করতে করতে গৌতমদাকে আজকাল খুব মনে পরে। ওনারই শিক্ষার আলো আঁকড়ে আবারও অধ্যাপক মঞ্চে উঠবে। চৈতির প্রথম প্রচেষ্টাকে সর্বতভাবে সফল করতে চেষ্টা করবো।
সন্দর্ভ, শিশিক্ষুর পর অফবিট থিয়েটারের প্রযোজনায় চৈতি ঘোষালের পরিচালনায় এপ্রিলের ৫ তারিখ নতুনরূপের রক্তকরবী নিয়ে আমরা আসছি। নাট্যপ্রেমী সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা রক্তকরবী দেখতে আসুন। আমাদের আবারও রক্তকরবীর সঙ্গে নতুনভাবে পথচলায় আপনারাও সামিল হোন। আগামীদিনে আরও অনেক শো আমরা করবো। আপনাদের সহযোগিতা সেই পথকে সুগম করবে এই আশা রাখি।।