দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের মন জয় করেই বাজিমাত করতে চাইছে কংগ্রেস ৷ এ দিন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় চল্লিশ শতাংশ টিকিটই মহিলা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে৷যদিও তিনি ভোটে লড়বেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি প্রিয়ঙ্কা। তবে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ৪০৩টি আসনের প্রার্থী পদের জন্য আলাদা করে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
লখনউয়ে সাংবাদিক বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘আপনাদের (মহিলাদের) রক্ষা করার জন্য কেউ নেই। মুখে যাঁরা আপনাদের রক্ষা করার কথা বলছেন, তাঁরা নিজেরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন, আপনারা পাচ্ছেন না।’’ মঙ্গালবার তিনি মহিলাদের এগিয়ে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের ২ হাজার টাকা আর গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছে সরকার, কিন্তু নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখেনি। আমরা শক্তিশালী মহিলা প্রার্থী চাই, দলীয় ভাবে আমরা মহিলাদের আলাদা প্রাধান্য দেব।’’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধির ঘোষণা থেকেই পরিষ্কার, উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে বরাবর জাতপাতের রাজনীতির যে অঙ্ক কষা হয়েছে, তার বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন রণকৌশলে এগোতে চাইছে কংগ্রেস ৷ প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘মহিলারা পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং তাঁদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন৷ এই সিদ্ধান্ত উত্তর প্রদেশের মেয়েদের জন্য৷ যে মহিলারা পরিবর্তন চান, এই সিদ্ধান্ত তাঁদের জন্য৷’
তিন বছর আগেই উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব বোন প্রিয়াঙ্কাকে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের আগে দলের জন্য নতুন রণকৌশল নিয়ে হাজির হলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক৷ সাম্প্রতিক প্রায় সব বড় নির্বাচনেই কংগ্রেস নেতৃত্ব গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামতেই যেন অনেকটা দেরি করে ফেলছিলেন৷ দলের ভিতর থেকেই এমন অভিযোগ উঠছিল৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই দলের রণকৌশল স্পষ্ট করে দিলেন প্রিয়াঙ্কা৷
উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে বরাবরই ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয় জাতপাত নির্ভর ভোটের অঙ্ক৷ এ বারেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়৷ কারণ ইতিমধ্যেই বিজেপি-র উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণদের মন জয়ের চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ যোগী আদিত্যনাথ রাজপুত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করায় উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণদের একটা বড় অংশ বিজেপি-র উপরে মনক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন৷ সম্ভবত সেই কারণেই ছেলের বিরুদ্ধে লখিমপুর খেরি কাণ্ডে চারজনকে চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে অজয় মিশ্রকে সরানো হয়নি৷
উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে চেনা জাতপাতের হিসেবের উর্ধ্বে উঠে মহিলাদের ক্ষমতায়ণকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে কংগ্রেস৷ এমনিতে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের অবস্থা বেশ খারাপ৷ সেখান থেকে প্রিয়াঙ্কার দেখানো পথে মহিলাদের সামনে রেখে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে৷ যোগী আদিত্যনাথকে আক্রমণ করে এ দিনও প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘যাঁরাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তাঁদেরকে উত্তর প্রদেশে দমিয়ে দেওয়া হবে৷’
সাংবাদিক বৈঠক থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যানাথকেও আক্রমণ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। টেনে এনেছেন সাম্প্রতিক লখিমপুর খেরির প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়ি ব্যবহারের কথাও তুলেছেন তিনি। উন্নাও, হাথরস, সোনভদ্রের আদিবাসী মহিলার উপর নির্যাতন, এমনই নানা প্রসঙ্গ তুলে প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত এই সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বার্তা।’’