দেশের সময়: প্রয়াত হলেন সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। প্রবীণতম ওই সন্ন্যাসিনীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। রবিবার প্রায় মাঝরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে তাঁকে বেশ কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। গত ৭ ডিসেম্বর তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁকে আইসিইউতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। সঙ্গে জ্বর ছিল। ফলে চিকিৎসকদের উদ্বেগ ছিল। সঙ্গে ভক্তরাও রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সন্ন্যাসিনী।
সোমবার সকালে তাঁর পার্থিব দেহ নিয়ে আসা হয় দক্ষিণেশ্বরে সারদা মিশনের প্রধান কার্যালয়ে। সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন অগণিত ভক্ত। মঠ সূত্রে খবর, কাশীপুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এবছরই তাঁর ১০২ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হয়েছে। সারদা মিশন সূত্রে খবর, শনিবার রাত থেকে শারীরিক অবস্থা আচমকা খারাপ হতে শুরু করে। ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তাঁকে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বিদায় নিলেন সংগঠনের চতুর্থ অধ্যক্ষা। ২০০৯ সালের এপ্রিলে ওই পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। টানা ১৩ বছর ওই পদ অলঙ্কৃত করেছেন। প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজির জন্ম ১৯২০ সালে। ঈশ্বরের প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় কল্যাণী দি।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্গে তাঁর ওতপ্রোত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সারদেশ্বরী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে স্বাামী শঙ্করানন্দের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন ব্রহ্মচর্য দীক্ষা। তারপর থেকেই কঠোর তপস্যায় ডুব দেন তিনি। সন্ন্যাস নিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম গুরু শঙ্করানন্দের কাছ থেকে। ১৯৬০ সালে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হন।
টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালের উন্নতিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন তিনি। ওই হাসপাতালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই ১০ শয্যার প্রসূতি সদর থেকে ১০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত হয় মাতৃসদন।
তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা। গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটবার্তায় লেখেন, আজ মন ভারাক্রান্ত। মাতাজির প্রয়াণে গভীরভাবে শোকস্তব্ধ। তাঁর শিষ্যদের কাছে এ এক অভাবনীয় ক্ষতি। তাঁর প্রয়ানে সঙ্ঘ ও বৃহৎ জনজীবনে গভীর আধ্যাত্মিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতার সৃষ্টি হল। শ্রী সারদা মঠের তথা রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সন্ন্যাসিনী ও ভক্তদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই।