PM Modi Swearing-in Ceremony প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না বাংলা

0
97
হীয়া রায়, দিল্লি

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে স্পর্শ করলেন নরেন্দ্র মোদী।শুক্রবার থেকেই ‘নরেন্দ্র মোদী 3.0’ ট্রেন্ডিং। রবিবাসরীয় সন্ধেয় নয়াদিল্লির রাইসিনায়  প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিলেন তিনি।

তাঁর নাম ঘোষণার পরেই রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রাঙ্গণে শোনা গেল ‘জয় শ্রীরাম’ হর্ষধ্বনি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে গলা মিলিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন ‘ম্যায়, নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।’ এর পর একে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ৪১ জন প্রতিমন্ত্রী (পাঁচ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত-সহ)।

যা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন লোকসভায় ২৭২ আসনে জেতার কারণেই তৃতীয় মোদী মন্ত্রিসভার কলেবর হল ৭২। কারণ, পাঁচ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ছ’জন প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছে এনডিএর সহযোগী দলগুলিকে।

এদিন প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও, পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, নির্মলা সীতারামন প্রমুখ। সব মিলিয়ে শপথ নিলেন ৬৬ জন মন্ত্রী।

এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ৮,০০০-এরও বেশি অতিথি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুসহ ভারতের প্রতিবেশী ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমারের মতো বলি অভিনেতাদেরও দেখা যায় দর্শকাসনে। ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও।

কিন্তু মোদীর নেতৃত্বে নতুন এনডিএ সরকারেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না। অতীতে অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভা বা মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভার নিরিখে এ এক বৈপরীত্য বইকি।

এদিন বাংলা থেকে দুই সাংসদ শপথ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তবে তাঁদের পূর্ণ মন্ত্রী করা হচ্ছে না। দুজনকেই প্রতিমন্ত্রী করা হবে। এখানে বলে রাখা ভাল, খাতায় কলমে প্রতিমন্ত্রীদের কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা কার্যত হয় না। অতীতে বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় দেখা গিয়েছে, প্রতিমন্ত্রীদের কাছে সেই মন্ত্রকের পূর্ণ মন্ত্রীরা কোনও ফাইলই পাঠান না। ইউপিএ সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীরা একবার সমষ্টিগত ভাবে মনমোহনের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করেছিলেন। 

মোদী জমানাতেও তার কোনও বদল ঘটেনি। বরং গত দশ বছরের মোদী জমানায় বারবার অভিযোগ উঠেছে, যে ক্যাবিনেট মন্ত্রীরাই অনেক কিছু জানতে পারেন না। প্রায় সবই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পরিচালিত হয়। প্রতিমন্ত্রীরা তো দূরের গ্রহ। তাঁরা কেবল আলঙ্কারিক পদ নিয়ে রয়েছেন।
এখন কৌতূহলের বিষয়, কেন মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি যে নেতারা সাংসদ হয়েছিলেন, তাঁদের কোনও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল না। অনেকেই প্রথমবার সংসদ ভবন দেখেছেন। তাই প্রতিমন্ত্রী করা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ, পূর্ণ মন্ত্রী হতে গেলে প্রশাসনিক বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। দেবশ্রী চৌধুরী, জন বার্লা, বাবুল সুপ্রিয়, সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াদের তাই পূর্ণ মন্ত্রী করা যায়নি। 

এবার বাংলায় বিজেপির আসন কমেছে। ১৮ থেকে কমে হয়েছে ১২। তাই সেই অনুপাতে মন্ত্রিসভায় বাংলা থেকে প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে চার থেকে দুই করা হয়েছে। এবার উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেছেন বিজেপির ৬ জন সাংসদ। দক্ষিণবঙ্গেও জিতেছেন ৬ জন। আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল যে প্রথমবার জয়ীদের মন্ত্রী করা হবে না। সেই শর্তে প্রথমেই মনোজ টিগ্গা, কার্তিক পাল, সৌমেন্দু অধিকারী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়দের নাম বাদ গেছে। 
বিজেপির ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ভোটের খারাপ ফলের পরে রাজ্য বিজেপিতে রদবদল অবধারিত। নতুন সভাপতি হবেন। সেই কারণেই সুকান্তকে মর্যাদা দিয়ে একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হল। তা ছাড়া সুকান্ত লড়ে জিতেছেন। তিনি জেন্টলম্যান পলিটিশিয়ান। এলাকার কাজ করার জন্য তাঁর আগ্রহ দেখা গেছে। সাংসদ হিসাবেই তিনি তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রের জন্য নতুন ট্রেন চালু করা বা রাস্তার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করেছেন। সুকান্তকে মন্ত্রী করলে তার প্রভাব গোটা উত্তরবঙ্গে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। 

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রতিমন্ত্রী করায়, শান্তনুরও মর্যাদা বাড়ানোর প্রশ্ন ওঠেনি। শান্তনু মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই ফের তাঁকে মন্ত্রী করা হয়েছে। তবে শান্তনুূ দ্বিতীয়বার মন্ত্রী হলেও তাঁকে প্রতি মন্ত্রী করা হল।
বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, নিশীথ প্রামানিক, সুভাষ সরকার, জন বার্লা, শান্তনু ঠাকুররা যাতে তাঁদের এলাকায় বিজেপির প্রভাব বাড়াতে পারেন, সেই জন্য তাঁদের কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু নিশীথকে কোচবিহারের বাইরে যেতে বিশেষ দেখা যায়নি। জন বার্লাও কেবল বালুরঘাটে আটকে ছিলেন। সুভাষ সরকার গোটা পশ্চিমাঞ্চলে ঘোরেননি। শান্তনুও তথৈবচ। তাঁদের ভূমিকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও হতাশ। 

তবে এই সব সাত-সতেরোর মধ্যে একটা মোদ্দা বিষয় রয়ে গেল। তা হল, মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না। অথচ এই শতাব্দীর শুরু থেকে বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় বাংলার নেতানেত্রীরা কেন্দ্রে বড় দায়িত্ব সামলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার রেলমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে বাংলা প্রচুর রেল প্রকল্প পেয়েছে। নতুন নতুন মেট্রো পেয়েছে।

প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রে প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার বহু সুবিধা পেয়েছে বাংলা। প্রণবের হাত ধরেই বাংলায় অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নে একলপ্তে ৮৭৫০ কোটি টাকার অনুদানের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার, জল সম্পদ উন্নয়ন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। সবচেয়ে বড় কথা মন্ত্রিসভার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি তথা ক্যাবিনেট কমিটি অফ সিকিউরিটির সদস্য ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। দিল্লিতে বাংলার সেই দাপট গত ১২ বছর ধরে আর দেখা যাচ্ছে না। 

বাংলা থেকে কেন্দ্রে শেষ পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হওয়ায় ২০১২ সালের ২৬ জুন তিনি অর্থ মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। মন্ত্রিসভা থেকে প্রণব সরে যাওয়ার পর বাংলা থেকে অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পর থেকেই সেই প্রতিমন্ত্রী ছাড়া বাংলার কপালে আর কিছু জুটল না। এক টানা এক যুগ ধরে কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না বাংলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে রবিবার শপথ নেওয়া ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রীর মধ্যে বিজেপির ২৫ জন। এঁদের মধ্যে গুজরাত থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদ এস জয়শঙ্কর, সাকিন তামিলনাড়ুর নির্মলা সীতারামন, হিমাচল প্রদেশের নেতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা রয়েছেন। রয়েছেন রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পঞ্জাবের হরদীপ সিংহ পুরী। লোকসভা সাংসদদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের রাজনাথ সিংহ, গুজরাতের অমিত শাহ, মনসুখ মাণ্ডবীয়, সিআর পাটিল, মহারাষ্ট্রের নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল, অসমের সর্বানন্দ সোনোয়াল, কর্নাটকের প্রহ্লাদ জোশী, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর, রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ, ওড়িশায় ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাওঁ, মধ্যপ্রদেশের বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজস্থানের ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, বিহারের গিরিরাজ সিংহ, ঝাড়খণ্ডের অন্নপূর্ণা দেবী, তেলঙ্গানার জি কিষাণ রেড্ডি।

সহযোগী দলের পাঁচ পূর্ণমন্ত্রীর তালিকায় তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র কিঞ্জারাপু রামমোহন নায়ডু, জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর রাজীবরঞ্জন (লল্লন) সিংহ, জনতা দল সেকুলার (জেডিএস)-এর এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাস (এলজেপি)-এর চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা (হাম)-র জিতনরাম মাঝিঁ রয়েছেন।

সহযোগী দলের ছ’জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি)-এর জয়ন্ত চৌধুরী, রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া অঠওয়ালে (আরপিআই-এ)-র রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউর রামনাথ ঠাকুর, আপনা দল (সোনেলাল)-এর অনুপ্রিয়া পটেল, টিডিপির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি।
বিজেপি থেকে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ৩৫ জন। পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার ছাড়া তালিকায় রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের জিতেন্দ্র সিংহ, রাজস্থানের অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধরি, মহারাষ্ট্রের মুরলীধর মোহল, উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধরি, এসপি সিংহ বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিংহ, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, গোয়ার শ্রীপদ নায়েক, দিল্লির হর্ষ মলহোত্র, অন্ধ্রপ্রদেশের ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, ছত্তীসগঢ়ের তোখন শাহু, হরিয়ানার কৃষ্ণপাল গুজ্জর, অসমের পবিত্র মার্গেরিটা, বিহারের নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে।

প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় কর্নাটকের ভি সোমান্না, শোভা কারান্ডলাজে, কেরলের সুরেশ গোপী, তামিলনাড়ুর এল মুরুগান, উত্তরাখণ্ডের অজয় টামটা, মহারাষ্ট্রের রক্ষা খড়সে, তেলঙ্গানার বান্দি সঞ্জয় কুমার, ঝাড়খণ্ডের সঞ্জয় শেঠ, মধ্যপ্রদেশের দুর্গাদাস উইকে ও সাবিত্রী ঠাকুর, গুজরাতের নিমুবেন বাহ্মনিয়া। পঞ্জাবের রভনীত সিংহ বিট্টু এবং কেরলের জর্জ কুরিয়েন সংসদের কোনও কক্ষের সদস্য না হয়েও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।

Previous articleNarendra Modi Oath Taking Ceremonyতৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদী
Next articleShantanu Thakur শান্তনুকে দ্বিতীয় বার মন্ত্রী করে পুরস্কার মোদীর ,যশোর রোড সম্প্রসারণ ও ইছামতী নদী সংস্কারের প্রত্যাশা বনগাঁবাসির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here