- দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃলোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ সফরে প্রাক ভোট কী কী ‘ইস্যু’ নরেন্দ্র মোদী তুলে ধরবেন? সেই দিকেই তাকিয়ে ছিল বঙ্গ রাজনৈতিক মহল।
বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালি-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখ। ঠিক তার পরের দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় যে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে তা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। হলও তাই। সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আরামবাগের সভা থেকে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মোদী। শুধু তাই নয়, ‘দিদি’ বলে উল্লেখ করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেছেন মোদী। দেখুন ভিডিও
একই সঙ্গে গত কয়েক বছরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়েও সরব হলেন মোদী। বুঝিয়ে দিলেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে তৃণমূলকে আক্রমণের জন্য সন্দেশখালি এবং দুর্নীতিকেই ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি। রাজ্যে প্রচারের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী বিজেপির রাজ্য নেতাদেরও পথনির্দেশ করে দিলেন।
এদিন মহিলা, যুবকদের জন্যও বিশেষ বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আরামবাগের সভা থেকে ‘মোদীর গ্যারান্টি’ ভেসে এল।
এদিন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে পুর নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মোদী বলেন, ‘এত নোট কখনও দেখেছেন সিনেমাতে দেখেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ মোদীর গ্যারেন্টি! লুঠনে ওয়ালোকো লটানা পড়েগা (যাঁরা লুঠ করেছেন তাঁদের ফেরত দিতে হবে)। মোদী ছোড়নে ওয়ালা নেহি হ্যায় (মোদী কাউকে ছাড়বে না। আমি থামব না। পশ্চিম বাংলার বোন, গরিব, যুবকদের গ্যারেন্টি দিয়েছি।যে গরিবকে লুঠ করেছে তাকে ফেরত দিতেই হবে।’
এদিন ইন্ডিয়া জোটকে খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘পটনা, বেঙ্গালুরু তাঁরা বৈঠক করেছেন। কংগ্রেস এখানের মুখ্যমন্ত্রীর থেকে জবাব চাইতে সাহস পায়নি। কংগ্রেস যা বলেছে তা শুনলে চমকে যাবেন। কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, বাংলাতে এই সমস্তকিছু চলতেই থাকে।’
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষক থেকে শুরু করে পুর নিয়োগ-সমস্ত জায়গাতে দুর্নীতি করা হয়েছে।’ লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গে এসে ভোটের আগে সুর বেঁধে দেবেন প্রধানমন্ত্রী মনে করা হচ্ছিল এমনটাই। সেই মোতাবেক তিনি বাংলায় এসে একের পর এক উল্লেখযোগ্য বার্তা দিলেন। পাশাপাশি এদিন শুভেন্দু অধিকারী জানান, ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর ঘোরালে দেখা যাবে, বাংলা. ১৮টি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। এবার একলাফে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়াতে চাইছে গেরুয়া শিবির, তা স্পষ্ট। এদিকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার নরেন্দ্র মোদীও উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, ‘৪ বছরে ১১ কোটির বেশি নতুন বাড়িতে জল সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু, প্রতি বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার সঠিক গতিতে কাজ করছে না। কেন্দ্র টাকা দিলেও রাজ্য কাজ করছে না। গরিবদের ভালোর জন্য কাজ করা হচ্ছে না।’ আয়ুষ্মান কার্ডে দেশে কোটি কোটি পরিবারের বিনামূল্যে চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাতে সেই সুবিধা পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেন মোদী।
বৃহস্পতিবার আরামবাগের কালীপুর মাঠে দলীয় সভার আগে একটি সরকারি কর্মসূচিতেও যোগ দেন মোদী। সেখানে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। সেই প্রসঙ্গ দিয়েই বক্তৃতা শুরু করেন। পৌনে ৪টে থেকে সওয়া ৪টে পর্যন্ত আধ ঘণ্টার বক্তৃতার শুরুর দিকে মোদী রেল-সহ বিভিন্ন খাতে বাংলার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র কী কী করেছে তা বলেন। তবে বেশি সময়টাই ছিল তৃণমূলকে আক্রমণ।
সভার শুরুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তোলেন। আর সেই সুরেই মোদী বক্তৃতা শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চলে যান উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার অবস্থা আজ গোটা দেশ দেখছে। মা, মাটি মানুষ— এই ঢোল পেটায় যারা, সেই তৃণমূল সন্দেশখালির বোনদের সঙ্গে যা করেছে, তা দেখে গোটা দেশ দুঃখিত।’’
আরামবাগ লোকসভা এলাকার মধ্যেই খানাকুলে জন্ম রামমোহন রায়ের। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘যা হচ্ছে সন্দেশখালিতে, তা দেখে রামমোহন রায়ের আত্মা কাঁদছে। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই খানাকুলে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতা সন্দেশখালিতে দুঃসাহসের সব সীমা পার করেছে। ওখানকার মহিলারা মমতা দিদির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। বিজেপির নেতারা রাতদিন মা-বোনদের সম্মানের জন্য লড়াই করেছেন। লাঠির আঘাত সয়েছেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার বাংলার পুলিশ আপনাদের সামনে মাথানত করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।’’
অন্য দলের নাম সে ভাবে না নিলেও বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকেও আক্রমণ শানিয়েছেন মোদী। সে ক্ষেত্রেও সন্দেশখালিই ছিল মোদীর অভিযোগের কেন্দ্রে। আরামবাগের সভা থেকে বলেন, ‘‘পটনা, বেঙ্গালুরু, আর কোথায় কোথায় এঁরা এক সঙ্গে বসে বৈঠক করেন। অথচ কংগ্রেস এখানকার মুখ্যমন্ত্রীর থেকে জবাব চাওয়ার সাহস করেননি। সন্দেশখালির এই বোনদের মতামত এক বারও দেখা হয়নি।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘কংগ্রেস যা বলেছে, শুনলে চমকে যাবেন। কংগ্রেসের সভাপতি বলেছেন, বাংলায় এ সব চলতেই থাকে।’’
বাংলাকে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল। কলকাতায় ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। তার আগে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘দুর্নীতিতে জর্জরিত বলেই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের বিরুদ্ধে ধর্না হয় এখানে। মোদী এ সবে ভয় পান না। আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে গ্যারান্টি দিয়েছি।’’ যাঁরা গরিবকে লুটেছেন, তাঁদের রাজ্য থেকে হঠানোর ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লুঠনেওয়ালে কো লোটানা হোগা।’’