গুজরাতের জনসভা থেকে আবার পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যারা সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত।’ ‘অপারেশন সিঁদুর’কে ভারতীয়দের ‘সংস্কার’ এবং ‘ভাবনার অভিব্যক্তি’ বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী।

গুজরাটের সভা থেকে অপারেশন সিঁদুরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোদী। সেনা অভিযানে সাফল্য়ের পর সোমবার নিজের রাজ্যে সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে আহমেদাবাদে ৫০ হাজার জনতার সামনে রোড শো। তারপর লক্ষ-কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস। সব মিলিয়ে সোমেই প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার গুজরাতের দাহোদে একটি জনসভায় গিয়েছিলেন মোদী। সেখান থেকে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীরা যা করেছে, তার পরে কি ভারত চুপ করে থাকতে পারত? মোদী কি চুপ করে থাকতে পারত? যখন কেউ আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তখন তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত। যদি কেউ আমার বোনের সিঁথির সিঁদুর মুছে দেয়। তখন তাকে এই পৃথিবী থেকে মুছে যেতে হবে। ওরা স্বপ্নেও ভাবেনি, মোদীর সঙ্গে লড়াই করা কতটা কঠিন।’

অপারেশন সিঁদুর শুধুই একটা সামরিক অভিযান নয়। এটা ভারতীয়দের সংস্কার, ভাবনার অভিব্যক্তি।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে, তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, মোদীর সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন।’’

তাঁর সংযোজন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা দেশের ১৪০ কোটি জনগণের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল। তাই মোদীও ঠিক সেটাই করেছে। যা করার জন্য আপনারা আমাকে প্রধান সেবকের পদে বসিয়েছেন। মোদী তাঁর তিন সেনাবাহিনীকেই ফ্রি-হ্যান্ড দিয়েছিল। তার ওই বীরেরা যা করেছেন। তা প্রশংসাযোগ্য। ২২ তারিখ ওরা যে খেলাটা শুরু করেছিল, তার শেষটা ৬ তারিখ রাতে ২২ মিনিটেই শেষ করেছে ভারত।’

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি। অভিযোগ, জঙ্গিরা বেছে বেছে একটি বিশেষ ধর্মের পুরুষদের গুলি করে খুন করেছিল। মহিলা বা শিশুদের মারা হয়নি। অনেকেই চোখের সামনে স্বামীকে মরতে দেখেছেন। এই ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। গত ৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা।

তার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তান হামলা চালায়। টানা চার দিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে। গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। মোদী দাহোদের জনসভা থেকে বলেন, ‘‘সন্তানের সামনে তার বাবাকে গুলি করে দিচ্ছে। সে দিনের ছবি দেখলে আজও রক্ত গরম হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা ১৪০ কোটি ভারতীয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল। মোদী সেটাই করেছে, যার জন্য দেশবাসী আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।’’

পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে মোদী আরও বলেন, ‘‘দেশভাগের পর যে দেশটার জন্ম হয়েছিল, তার একমাত্র লক্ষ্যই হল ভারতের সঙ্গে শত্রুতা করা। ভারতকে ঘেন্না করা। ভারতের ক্ষতি করা। কিন্তু ভারতের লক্ষ্য তা নয়। ভারতের লক্ষ্য দেশ থেকে দারিদ্র দূর করা। দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তোলা। আর দেশের সেনা মজবুত হলেই বিকশিত ভারত গড়া সম্ভব। আমরা তার জন্য অনবরত কাজ করে চলেছি।’’

উল্লেখ্য, দু’দিনের গুজরাট-সফরে ঠাসা কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর। সোমবার দাহোদ ও ভূজে ৮২ হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাসের পর তিনি চলে যাবে গান্ধীনগরে। এই ভূজেই যেখানে ড্রোন হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল পাকিস্তান, সেখানেও প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করবেন মোদী। যার মধ্য়ে অন্যতম কান্ডলা বন্দর প্রকল্প, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পাশাপাশি,আনন্দ-গোধরা, মেহসানা, পালনপুর, রাজকোট-হাদমাটিয়া পর্যন্ত চলা ২ হাজার কোটি টাকার রেলট্র্য়াক, বৈদ্যুতিকরণেরও একটি প্রকল্প সোমবার উদ্বোধন করতে পারেন তিনি।