অশান্ত বাংলাদেশ। তার জেরে অনুপ্রবেশকারীরা এপার বাংলায় যে কোন মুহুর্তে ঢুকতে পারে কাঁটাতার পেরিয়ে এমনই আশঙ্কা করছেন পুলিশ – প্রশাসন । তাই যাতে কোনওভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পারে কোন অনুপ্রবেশকারী , তার জন্য পেট্রাপোল সীমান্তের ১০টি গ্রাম সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হল। শুক্রবার বিকেলে ওই গ্রামগুলোয় একসঙ্গে ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা চালু করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ-প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাগত জানিয়েছেন। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারপর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার শুরু হয়েছে। চলছে বেপরোয়া লুঠপাট। মৌলবাদীদের অত্যাচারে অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ছেন।
বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও সেই সুযোগে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
অনুপ্রবেশ রুখতে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তেও বিএসএফ নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনও আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন। ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে মোট ১০টি গ্রাম রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে সব গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হল।
সীমান্ত সড়ক ধরে মোট ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা এদিন বসানো হয়েছে। ছয়ঘরিয়ার প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘পেট্রাপোল স্থল বন্দর আমাদের পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন।
চোরাপথে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় সীমানায় ঢুকে যে কোনও অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাই বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ৫০টি সিসি টিভি ক্যামেরা চালু করা হল। ওই সিসিটিভি ক্যামেরায় পুলিশ-প্রশাসন নজরদারি চালাবে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও তাতে কড়া নজর রাখা হবে।’
প্রসঙ্গত,ভারত-বাংলাদেশের ২২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ১৮৪৯ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত। জল সীমান্ত ১৭০ কিলোমিটার। দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাটাতার নেই। দিনের বিভিন্ন সময়ে এই ফেন্সিংহীন এলাকায় সবচেয়ে বেশি নজরদারি করেন বিএসএফের জওয়ানরা। যেখানে ফেন্সিং রয়েছে, সেখানে নজর তুলনামূলক ভাবে কম। তারই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশিরা টাকার বিনিময়ে কাটাতারের মধ্যে দিয়ে রাস্তা তৈরি করে লোক পারাপারের কাজ করেন বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে মূলত উত্তর ২৪ পরগনা , নদিয়া- মুর্শিদাবাদ দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা বেশি করে থাকেন অনুপ্রবেশকারীরা। কারণ, ওখান থেকে কলকাতায় সহজে ঢুকে পড়া যায়।
গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পাওয়ার পরে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে বিভিন্ন সীমান্ত লাগোয়া জেলার পুলিশ এবং বিএসএফ। রাজ্যের আটটি জেলা থেকে প্রায় ৫৫ জন ভারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গের সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৯৪ জন অনুপ্রবেশকারীকে।
থার্মাল, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়। বিএসএফ সূত্রে দাবি করা হয়েছে,জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীমান্তে সারপ্রাইজ় ভিজিট বাড়ানোর জন্য।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং এ পারে সে দেশের জঙ্গি গ্রেফতার হওয়ার পরে, বাহিনীকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএসএফের (সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি মনিন্দর সিংহ পওয়ার। সাম্প্রতিক নির্দেশে জওয়ানদের বলা হয়েছে, তাঁদের সদাসতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া, ‘চরম’ পদক্ষেপ করা যাবে না। বিশেষ করে, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া সীমান্ত নিয়ে বিএসএফ-কর্তার ওই বার্তা।