দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি তুলেছিলেন, অবিলম্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করা হোক। সেইসঙ্গে বহিষ্কার করা হোক দল থেকেও। অনেকের মতে, এটা ব্যক্তি কুণালের দাবি বললে ভুল হবে। তৃণমূলে একটা বড় অংশেরই দাবি তাই। সেই দাবিতে সিলমোহর পড়ে গেল।
দুপুরে মন্ত্রিসভা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিকেলে দলের বৈঠকের পর পার্থকে মহাসচিব পদ থেকেও সরিয়ে দিল তৃণমূল। শুধু মহাসচিব নয়, তৃণমূলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে যে পদ ছিল সব পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দলের সমস্ত পদ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণ করে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তৃণমূলের মহাসচিব, জাগো বাংলার সম্পাদক, জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য এবং শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান—এই সব পদ থেকে পার্থকে সরিয়ে দিল তৃণমূল।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এই তদন্ত প্রক্রিয়া যতদিন চলবে ততদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাসপেনশন বহাল থাকবে। তিনি যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে দলের দরজা তাঁর জন্য খোলা থাকবে।
দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিবই নন। রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রীও তিনিই। কিন্তু এদিনই পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কী হতে চলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান? এই নিয়ে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মহলে চলছে জোর চর্চা।
ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দলের কী অবস্থান তা এখনও স্পষ্ট করছিল না তৃণমূল হাইকম্যান্ড। কিন্তু বৃহস্পতিবার তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”বিপুল পরিমাণ টাকা যা উদ্ধার হয়েছে তার উৎস কী? মোদী বলেছিলেন কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে সব। আমি কাউকে ডিফেন্ড করছি না। যদি কেউ অন্যায় করে থাকে৷ অবিচার হয়ে থাকে। তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করবে না। মমতা বন্দোপাধ্যায় যা বলেছিলেন আজ তা তিনি করে দেখিয়েছেন। অর্থ রোজগারের মেকানিজম হলে দল সমর্থন করবে না।”
অভিষেকের সংযোজন, ”মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী, ফলে উদ্বোধনের সময় কে থাকবে তা দেখা সম্ভব নয়। পামেলার সঙ্গে বিজেপির অনেকের ছবি আছে। আজ বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত সবার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই দলের সমস্ত পদ থেকে অপসারণ করা হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।”
এই পরিস্থিতিতে আজই দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির বৈঠক ডেকেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পরেই সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”বিগত সপ্তাহে ২২ জুলাই একটা ঘটনা ও তাকে কেন্দ্র করে নানা তথ্য জনসমক্ষে এসেছে। ইডি এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ২২ জুলাই আমাদের দলের এক প্রবীণ সদস্য, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সহকর্মী, বিরোধী দলনেতাও ছিলেন তিনি, তাঁকে গ্রেফতার করে। ২৩ জুলাই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমরা মমতা বন্দোপাধ্যায় কাছে পাঠাই। আমাদের করণীয় সভানেত্রী কে জানাই।”
অভিষেকের সংযোজন, ”২৮ জুলাই এ বিষয়ে বসার কথা জানাই। সব সদস্যরা আসেন৷ তারা তাদের নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন। যে ঘটনা ঘটেছে বা যে তথ্য সামনে এসেছে, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তদন্ত কতদিন চলবে, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ যদিও এই দল তৈরি হয়েছিল মানুষের জন্য। বিজেপির কাছে হার মানেনি এই দল৷ এই দলে আছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের লড়াই। মানুষের আশা। সাধারণ মানুষের সাথে অবিচার হলে আমরা আপোষ করিনা। দল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে চলে।