
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই ফ্ল্যাট মিলিয়ে ইডি ৫০ কোটির বেশি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি । কিন্তু এত টাকা এল কোথা থেকে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি। শুক্রবার আদালতে ইডির তরফে দাবি করা হয় অর্পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে যোগ রয়েছে কুন্তল ঘোষের !

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত হুগলির তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়িতে টাকা মেলেনি, তাও কেন আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তাঁকে? তৃণমূল নেতার আইনজীবীর এই প্রশ্নের জবাবে আদালতে পার্থ-অর্পিতার সঙ্গে কুন্তলের যোগ রয়েছে বলে দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

কুন্তলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বারাসতের তাপস মণ্ডলের বয়ানের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে। ইডি হেফাজতে জেরা করে কুন্তলের থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে বলে এদিন আদালতে দাবি করে ইডি।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জানায়, চাকরি দেওয়ার নাম করে বাজার থেকে কুন্তল কোটি কোটি টাকা তুলেছে, তার প্রমাণ মিলেছে। কীভাবে টাকা তোলা হয়েছে? ইডি সূত্রে খবর, ১৩০ জনের থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন কুন্তল। শুধু তাই নয়, ১২০০ জনের থেকে ২০ হাজার করে নেওয়া হয়েছে।

ইডি আদালতে আরও দাবি করে, চাকরি দেওয়ার নামে কুন্তল ৩০ কোটি টাকা তুলেছেন। এরপরই ইডি দাবি করে, বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার চক্রে সরাসরি যোগ রয়েছে কুন্তলের। টাকা তুলে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। কুন্তল ও সহযোগীদের মাধ্যমে পার্থ ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে টাকা গিয়েছে।
শুক্রবার আদালতে কুন্তলের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছে ইডি। সম্প্রতি কুন্তলের বাড়ি থেকে ৩০টি ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) বাজেয়াপ্ত করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা। আশ্চর্যের বিষয, সেই ওএমআর শিটগুলি ছিল গত ১১ ডিসেম্বর নেওয়া টেট পরীক্ষার। কীভাবে সেইসব ওএমআর শিট কুন্তলের বাড়িতে গেল সেই প্রশ্ন উঠেছিল।

এদিন আদালতে ইডি দাবি করে, কুন্তলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিটের সংখ্যা ৩০ নয়, ২৫০!
বাজেয়াপ্ত করা এই ওএমআর শিটগুলি আরটিআই করে মিলেছে বলে দাবি করেছেন কুন্তল। কিন্তু কেন আরটিআই করার প্রয়োজন পড়ল তার সদুত্তর দিতে পারেননি তৃণমূল নেতা। কুন্তলের আইনজীবী এদিন আদালতে বলেন, ‘তাপস মণ্ডলকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এখনও?’

কুন্তলের ১৯,৩০,০০,০০০ টাকার হিসেব পাটিগণিতে কীভাবে বোঝাল ইডি?
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তাপস মণ্ডল জানিয়েছিলেন, চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিতেন কুন্তল ঘোষ । ১৯ কোটি চাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তবে হুগলির তৃণমূল যুবনেতা রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আদালতে জানিয়েছিল, আদতে নাকি ৩০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল।

শুক্রবার কুন্তলকে আদালতে পেশ করা হয়। এদিন ইডি ১৯ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার হিসেব পেশ করেছে। কতজন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে, কত টাকা, কী কারণে নেওয়া হয়েছিল, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে বাকি টাকা কোথায় গেল, তা জানতে এখনও তদন্ত চলছে বলে উল্লেখ করেছে ইডি।

এদিন ইডি জানিয়েছে, তদন্তে জানা গিয়েছে ১২০০ জন প্রার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে মামলা করে যাতে তাঁদের পক্ষে রায় হয় ও তাঁরা চাকরি পান, সে জন্যই এই টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি গোয়েন্দা সংস্থার। ১২০০ জন প্রার্থীর থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হলে হয় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এছাড়া ১৩০ জন প্রার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যা হিসেব করলে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪০ লক্ষ। এছাড়া আরও সাড়ে ৬ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে বলেও দাবি করেছে ইডি। অর্থাৎ ১০ কোটি ৪০ লক্ষ, ২ কোটি ৪০ লক্ষ ও ৬ কোটি ৫০ লক্ষ মিলে হয় ১৯ কোটি ২০ লক্ষ।

এই টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতা বা অতি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। তবে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি এদিন। ইডি-র তরফে আরও জানানো হয়েছে, পার্টনারশিপ ফার্ম তৈরি করে কুন্তল বিনোদন জগতে পা দিয়েছিলেন। সেই টাকার উৎস কী, সেটাও জানার চেষ্টা হচ্ছে। ইডি জানিয়েছে, ফরেনসিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তদন্ত করছে তারা।

উল্লেখ্য, এদিন কুন্তলকে যখন আদালতে তোলা হয় তখন তিনি দাবি করেন, ‘তাপস বিজেপির লোক।’
কুন্তলের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
