দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার রাতে নানান কারণে তাঁকে কলকাতায় আনা যায়নি। সন্ধের পরেই ইডি জানিয়েছিল, রাতটা ভুবনেশ্বরের এইমসেই রাখা হবে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে । তারপর মঙ্গলবার কাক ভোরে ভুবনেশ্বর থেকে পার্থকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন ইডি অফিসারেরা। সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন পার্থবাবু । তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবারই বলেছেন, যদি দোষ প্রমাণ হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা এ প্রসঙ্গে পার্থের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, তিনি স্পষ্টই বলেন, “ঠিক বলেছেন”।
সোমবারই নজরুল মঞ্চের এক অনুষ্ঠান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, “সত্যির বিচার হোক। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড। যদি কেউ চোর হয়, ডাকাত হয়, তৃণমূল কংগ্রেস রেয়াত করে না। আমি নিজেদের ছেলেদের গ্রেফতার করিয়েছি। অন্যায় করলে আমি নিজের বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীদেরও রেয়াত করি না। যদি কেউ খারাপ কাজ করেন, বিচারে তাঁকে যতই চরম শাস্তি দিক না কেন, আমাদের কেউ এই বিষয়ে নাক গলাবে না। আমরা কোনওভাবেই পাশে দাঁড়াব না। আমি জীবনে যা করিনি, তা আমি করব না।”
দলনেত্রীর এই কথায় যে কোনও দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই, এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে তা স্পষ্ট স্বীকার করে নেন পার্থ। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থর এই সম্মতিসূচক জবাব আসলে দলের প্রতি কিছুটা অভিমানও। এদিন হুইল চেয়ারে করেই বিমান থেকে নামিয়ে ইডির গাড়িতে তোলা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সোমবারই ব্যাঙ্কশাল আদালত নির্দেশ দিয়েছে ১০ দিনের ইডি হেফাজতের। সকাল ৭টার কিছু পরেই পার্থকে নিয়ে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ঢুকে যায় ইডির গাড়ি। আপাতত সেখানেই থাকবেন তিনি।
আদালত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ১০ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে আপাতত সিজিও কমপ্লেক্সেই থাকবেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা।
এদিন ভোর সওয়া চারটে নাগাদ ভুবনেশ্বর এইমস থেকে পার্থকে নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় ইডি। পৌনে পাঁচটা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছয় কনভয়। পাঁচটা পঞ্চাশ মিনিটের বিমান ওড়ে ভুবনেশ্বর থেকে।
গতকাল বিকেলেই এইমসের চিকিৎসকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পার্থবাবুর শারীরিক অবস্থা গুরুতর নয়। তাই তাঁকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে পার্থের এক ‘ঘনিষ্ঠের’ কাছ থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। তাঁর বাড়িতে তল্লাশির সময় ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদ ছাড়াও সোনাদানা, বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ইডি মনে করছে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ঘোটালা হয়েছে।
তার মধ্যে যা উদ্ধার হয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বেশিটাই বাকি। সেই টাকা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে, সেটাই এখন ইডির আধিকারিকদের মূল ফোকাস। সে কারণেই পার্থ-অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, সোমবার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়েরও ১০ দিনের ইডি হেফাজত হয়েছে। তিনি এখন সিজিও কমপ্লেক্সেই আছেন।
ফলে আজ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিল্পমন্ত্রীকে জেরা করবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। গতকাল আদালতে ইডি তাদের সওয়ালে বলেছিল, এই সময়ের মধ্যে পার্থ ও অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় তারা। প্রাথমিক ভাবে দুজনকে একক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মুখোমুখি বসানো হবে তাঁদের।