দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সন্ধে ৬ টায় তাঁকে হাজিরা দিতে বলেছিল সিবিআই।
তার ১৫ মিনিট আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার পর টানা জেরা। সিবিআই একগুচ্ছ প্রশ্ন তৈরি করে রেখেছিল। সেই সব প্রশ্নই করা হয়েছে। শেষে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সিবিআই দপ্তর থেকে বের হন রাজ্যের মন্ত্রী।
বেশ হাসিমুখেই। তিনি বেরোতেই ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। সিবিআই কর্তারা কী প্রশ্ন করেছেন, জানতে চাওয়া হয়। যদিও পার্থ বাবু কোনও জবাব দেননি। সোজা বেরিয়ে নিজের এসইউভি গাড়িতে উঠে পড়েন। অনেকেই মনে করছেন, সিবিআই কর্তাদের যথাযথ উত্তর দিয়েছেন। সে কারণেই বেশ হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন তৃণমূলের মহাসচিব।
সূত্রের খবর, পরের সপ্তাহে ফের তলব করা হতে পারে পার্থকে। ফের একগুচ্ছ প্রশ্ন করা হতে পারে তাঁকে। কারণ এখনও বহু প্রশ্নের জবাব মেলেনি। এত বড় দুর্নীতি কাণ্ডে সাড়ে তিন ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব মেলাও সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সিবিআই আধিকারিকদের একাংশ। তাঁরা এও মনে করছেন, উপদেষ্টা কমিটির পাঁচ সদস্যের মুখোমুখি বসিয়ে পার্থকে জেরা করা দরকার।
এই জেরা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, ‘কত বড় দুর্নীতি হয়েছে, তা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। দুর্নীতির মূলধারের নাম শুভেন্দু অধিকারী। এবার কান টানলে মাথা আসবে। স্বাধীনতার পর সবথেকে বড় দুর্নীতি হয়েছে।’ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নিয়ম অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়নি। তাই পার্থর মামলার কোনও রায় দিল না ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায় দানের পরেই নাকতলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান পার্থ বাবু। ১৫ মিনিট আগেই নিজাম প্যালেসে সিবিআই–এর দপ্তরে পৌঁছে যান তিনি।
বুধবার সন্ধে থেকে চাউর হয়ে যায় যে, পার্থবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার পৃষ্ঠার প্রশ্নমালা সাজিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি। সিবিআই সূত্র যদিও তা অস্বীকার করছে।
সূত্রের দাবি, স্কুল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সংক্রান্ত বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কিছু অভিযোগ এমন যে তা সাদা কালোয় পরিষ্কার। প্রশ্ন হল, সেই অনিয়মগুলি কি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েই করা হয়েছিল? দুই, কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত বাগ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে স্কুল সার্ভিসের উপদেষ্টা কমিটি গঠন অবৈধ ছিল।
এই অবৈধ কাজ কার নির্দেশে হয়েছিল? শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি কেন এই নির্দেশ দিয়েছিলেন? উপদেষ্টা কমিটির কতগুলো বৈঠক শিক্ষা মন্ত্রীর চেম্বারে হয়েছিল? সেই বৈঠকের কি কোনও কার্য বিবরণী রয়েছে? নাকি মৌখিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছিল মাত্র।
তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কমিটির সদস্যদের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে। সবথেকে অসঙ্গতি রয়েছে কমিটির চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহার কথায়। তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়ে থাকতে পারে পার্থবাবুকে।
কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, পার্থবাবুকে জেরা করার পর কাল পরশুর মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে পারেন তাঁরা। কারণ, আদালত যে ভাবে উপর্যুপরি নির্দেশ দিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে কোনওরকম দীর্ঘসূত্রিতা মেনে নেবেন না বিচারপতিরা। ছবি: টুইটার থেকে