অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: ফুচকা- এই নামটা শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গোল, মুচমুচে বলের পেটে ঝাল ঝাল আলু, টক জলের স্নান সেরে যখন জিভের ডগায় পৌঁছায়…আহ! একেবারে স্বর্গ। বাংলার ৯০ শতাংশ মানুষের প্রিয় মুখরোচক খাবার ফুচকা। আর এই ফুচকার উপর নির্ভর করেই রুজিরুটি চলে বহু মানুষের।

তবে শুধু আলু-টক জলের ফুচকাই নয়, বাঙালির এই প্রিয় খাবার যে আরও কতটা মুখরোচক হতে পারে সেই পরীক্ষা নিরীক্ষার আস্ত ল্যাব বলা যেতে পারে এই শহরকে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ শহরের কাঁচাগোল্লা নাম যেমন রয়েছে বাংলা জুড়ে তারই পাশাপাশি আজ বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে ফুচকার শহর হিসেবেও।
বনগাঁর নতুনগ্রাম ,সাতভাই কালীতলা, কালুপুর, জয়ন্তীপুর এলাকার প্রায় ১০০০ টির উপর পরিবার এই ফুচকা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। ফুচকার পুর যে আলু ছাড়া আর কী কী হতে পারে সেই বিশাল গবেষণায় ব্যস্ত এখানকার ফুচকা ব্যবসায়ীরা। রীতিমতো তাদের উদ্ভাবনী শক্তি এনেছে ফুচকার বিবরণ। টক-ঝাল আলুই নয়, এখানে ফুচকার পেটে পুর হিসেবে মেলে চিকেন কিমা, মটন কষা, আইসক্রিম থেকে চকোলেট, ভুট্টা আরও কত কী । বর্তমানে বাংলার এই ফুচকা শহরের উপকরণ অনুসরণ করেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হচ্ছে ফুচকা। দেখুন ভিডিও

স্বাদের বিবর্তনে এই শহরের জল ফুচকা ছাড়াও চকলেট ফুচকা, দই ফুচকা, ভুট্টা ফুচকা, ঘুগনি ফুচকা, চাটনি ফুচকা আরও নানা ধরনের ফুচকার সন্ধান মেলে এখানে। সকাল হতেই ফুচকা তৈরির কাজে লেগে পরেন এই শহরের কারিগরেরা, ময়দা, সুজি, চালের গুঁড়ো এইসব দিয়ে মণ্ড প্রস্তুত করে, সেগুলো ছোট ছোট রুটির আকারে বেলে নেওয়া হয়। তারপর হালকা করে শুকিয়ে কাঠের জালে ভাজা হয়। কেউ আবার কয়লার আঁচেও ফুচকা ভেজে থাকেন। তারপর মুচমুচে বল তৈরির জন্য সেগুলোকে রোদে ফেলে রাখা হয়। সেই সঙ্গে চলে সুস্বাদু মশলা তৈরির কাজ। পাকা তেঁতুল গোলা, গন্ধরাজ লেবু দিয়ে টক জল বানিয়ে ফুচকার পেট ফাটিয়ে, পুর ভরে পরিবেশন করা হয়।

কেউ আবার কয়লার আঁচেও ফুচকা ভেজে থাকেন। তারপর মুচমুচে বল তৈরির জন্য সেগুলোকে রোদে ফেলে রাখা হয়। সেই সঙ্গে চলে সুস্বাদু মশলা তৈরির কাজ। পাকা তেঁতুল গোলা, গন্ধরাজ লেবু দিয়ে টক জল বানিয়ে ফুচকার পেট ফাটিয়ে, পুর ভরে পরিবেশন করা হয়। এখানে এই গ্রামে ১০ টাকায় মেলে ১২টারও বেশি ফুচকা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,কেলবাবু দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ফুচকা তৈরি করেই সংসার চালাতেন। সেই থেকেই সূচনা এই শহরের ফুচকা ৷ বর্তমানে নতুনগ্রাম ,সাতভাই কালীতলা, কালুপুর, জয়ন্তীপুর শহর লাগোয়া এই গ্রামগুলি সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে ফুচকার জন্য। এই এলাকার তৈরি ফুচকা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখন এই এলাকায় ফুচকা খেতে ছুটে আসেন।

বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতেও এই এলাকার ফুচকা ব্যবসায়ীরা স্টল দেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ফুচকা কারিগরদের আক্ষেপ, সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত সেভাবে আর্থিক সহযোগিতা মেলেনি। ব্যবসা চালাতে বিভিন্ন বেসরকারি মাইক্রো ফাইনান্স সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে, টিকিয়ে রেখেছেন এই ফুচকা শিল্প। বাঙালির মুখরোচক খাবারের মধ্যে দিয়েই এই গ্রামের অনেক পরিবারের পেট চলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here