Pallir padābali : আদ্যান্ত শহুরে স্মার্টনেস রূপসী বাংলায় : রজত চক্রবর্তী

0
700

রজত চক্রবর্তী:  বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত যেভাবে জীবনানন্দকে প্রকৃতির কবি এবং তাঁর কবিতাকে চিত্রকল্পময় বলেছেন আপামর বাঙালি সেই ভাবেই দেখতে শিখেছে। ধুতি-পাঞ্জাবী পরা ক্ষীণস্বর ভীতুভীতু আদ্যান্ত বাঙালির নির্ভিক সতেজ জলন্ত উচ্চারণ রূপসী বাংলার আড়ালে হারিয়ে ফেলেছি। আশ্চর্য স্মার্টনেসে কবিতার শরীরে নম্র অথচ তীব্র রাগ বুনে দিতে পেরেছিলেন। অপাঠ থেকে গেছে। মায়াবী কোমল শব্দে শুনিয়েছিলেন শিশিরের পতন-ধ্বনি।

 

গ্রাম তথা পল্লী জীবনের ছবি জীবনের সবটুকু দিয়ে খুঁটে খুঁটে দেখে বেড়িয়েছেন অশোক কুমার কুন্ডু। পুরোনো পাঠকরা জানেন তাঁর নিবিড় অনুসন্ধান ও নিরন্তর গদ্যশৈলি নিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা। দীর্ঘ বছর ধরে টানা লিখে গেছেন আনন্দবাজারের পাতায় গ্রাম আশ্চর্য মানুষের কথা। লিখে গেছেন না জানা গ্রাম-বাংলার উপজিব্য সব উপাদান কথা যা আজ বিরল হচ্ছে ক্রমশ।  বহু বছরের শ্রম, বাস্তব নিরীক্ষণ ও সাধনা থাকলে এমন একটি ছিপছিপে নির্মেদ বই হতে পারে।

কাঁঠালপাতা পেতে পেতে দুপুরের রোদে দামোদরের বালির উপর দিয়ে খালি পা ফেলে ফেলে নববধূর হেঁটে যাওয়া ও একটি একটি করে তুলে আনা পা তোলার পর সেই পাতা এবং পাতাগুলো এনে পোষা ছাগলকে খেতে দেওয়া। এইরকম অনবদ্য সব দৃশ্য দেখা রয়েছে অশোক কুমার কুন্ডু র এই ছোট্ট বইটিতে। আশ্চর্য গ্রাম্য বেঁচে থাকার ইকো-সিস্টেম। পুকুর বা নদী থেকে স্নান করে উঠে ঘড়া করে অশত্থ, বট, আকন্দ ঝোপে সব জল দিতে দিতে দু’বেলে বাড়ি ঢোকে যে বধূরা অভ্যাসে তারা পোস্টার সাঁটিয়ে বলে না ‘গাছ বাঁচান’।

তাদের জীবন শৈলীতেই আছে প্রকৃতি সংরক্ষণের সব মশলাপাতি। অশোক কুন্ডুর গদ্য পড়তে পড়তে আপনি গাঁয়ের পুকুরের আঁশটে গন্ধটাও পাবেন, পাবেন বিভিন্ন মেলায় মিলনের ঘাম-মাখা বাউল সুর। শালের মঞ্জরী মাথায় দিয়ে নাচতে থাকা সাঁওতাল রমনীর নজর তখন উদোম আকাশের নীচে ফুটতে থাকা গ্রাম্য রেসিপিতে তৈরি ফুটন্ত খিচুড়ির দিকে। অশোক কুন্ডু শহুরে দূরত্ব নিয়ে গ্রাম দেখেননি তিনি তাঁর সমস্ত ইন্দ্রীয়, রক্ত-মজ্জা-স্নায়ু নিয়ে ওদের সাথে যাপন করেছেন জীবন। এ এক আনকম্প্রোমাইজিং এঁড়ে গরুর চলন। জীবনপাত করে দেখে বেড়ানোর দম্ এই বইয়ের প্রতিটি বাক্যে। ছোট্ট বইটি মহার্ঘ হয়ে উঠেছে লেখায়।

কিন্তু সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে উঠতে পারেনি বইটির প্রোডাকশনে। এই মাপের বইয়ের মর্যাদা বুঝতে পারলে এই ধরনের ইলাস্ট্রেশন করা হতো না। রামানন্দ বন্দোপাধ্যায়ের আঁকা প্রচ্ছদের সাথে আশেপাশের অদ্ভুত ডিজাইন আঁকার ফলে শুধু কদর্য হয়নি রামানন্দবাবুর মতো শিল্পীর অমর্যাদা হয়েছে। আশা করব পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রোডাকশন বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হবে।

 ‘আমার কুটির’, গ্রামবাংলার মাটির বাড়ির ইতিবৃত্ত; ‘মাটির উনুন’, বঙ্গের গ্রাম বাংলার মাটির উনুন কতরকমের, কোথাকার এবং তা ঘিরে গ্রাম্য গল্প –  ইত্যাদি কাজগুলি নিশ্চয়ই আবার প্রকাশ পাবে এবং আজকের প্রজন্ম পড়বেন আদ্যান্ত শহুরে স্মার্টনেসে গ্রামের নরম ভাবটি ধরার মুন্সিয়ানা। উপকৃত হবেন নিশ্চিতভাবেই।

Previous articleMahasweta Chakraborty: এ ৩২০ বিমানের চাকাটা ভারতীয় মাটি ছুঁল , মনে মনে তিনি বলে উঠলেন, ‘মা তুঝে সালাম’…
Next articleRampurhat Clash: বগটুইয়ে পৌঁছেই বাড়ি তৈরিতে ১ লক্ষ, হাতে ৫ লক্ষ, সঙ্গে সরকারি চাকরি, ক্ষতিপূরণ মুখ্যমন্ত্রীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here