দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বন্যায় ভাসছে পাকিস্তানের একাধিক প্রদেশ। গত তিন দশকে এরকম বৃষ্টি দেখেনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
বন্যার জলে ভাসছে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় হাজার জনের। ক্ষতিগ্রস্ত ৩ কোটিরও বেশি মানুষ। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে পাকিস্তানের হাওয়া অফিস।
এখন পাকিস্তানের প্রায় তিন কোটি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। চারসাড্ডা জেলার হাজার হাজার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
শিসপার হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়া আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি গিলগিট–বালতিস্তানের হুনজার বন্য পরিস্থিতিও আশঙ্কার বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু সংক্রান্ত মন্ত্রী একে ‘ঐতিহাসিক বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। এত ভয়ঙ্কর বন্যা পাকিস্তানে গত ৩০ বছরে হয়নি। হড়পা বানে ভেসে গেছে শহরের পর শহর। ৪৬ হাজারের বেশি বাড়ি বন্যার জলে ভেসে গেছে। চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্থ। বন্যার জেরে খাদ্য সঙ্কটও তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে।
পাক মন্ত্রী শেরি রেহমান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকাই জলের নীচে রয়েছে। মৃতের সংখ্যা যেমন হাজার ছাড়িয়েছে, তেমনি আহত প্রায় ১,৪০০। ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৩ কোটি মানুষ।
বন্যায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫টি সেতু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সিন্ধু প্রদেশের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, দুর্যোগের মাত্রা এমন হবে কল্পনা করতে পারেননি। অগস্টের গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় আট গুণ হয়েছে এ বছর।
পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘খাইবার পাখতুনখোয়ায় মুষলধারে বৃষ্টির ফলে সোয়াত এবং কালামে নদী এবং খালগুলি ফুসে উঠেছে। হোটেল এবং বাড়িঘর ভেসে গিয়েছে।’ সেনাদের প্রস্তুতির খোঁজ খবর নিতে বন্যা কবলিত প্রদেশগুলি পরিদর্শন করেছেন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দক্ষিণ-পশ্চিমের বালুচিস্তান প্রদেশ। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আবদুল কুদোস বেজেঞ্জো বলেছেন, ৭০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা জলে ভেসে গেছে। চাষের জমি ধুয়েমুছে গেছে। হাজার হাজার বাড়ি ভেঙেছে। যাতায়াত, যোগাযোগ ব্য়বস্থা বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ নেই অধিকাংশ এলাকায়। চরম খাদ্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
গত মাস থেকে বিধ্বংসী বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। ১৩৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে গত ৩০ বছরে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার অথরিটি জানাচ্ছে, ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানে বার্ষিক গড়ে ৩০৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বর্ষণে ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দুর্গতদের খাবার ও ওষুধপত্র দেওয়ার ব্য়বস্থা করা হয়েছে।
বন্যায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এদিকে সূত্র মারফত জানা গেছে, মানবতার খাতিরে পাকিস্তানের জন্য কিছু সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে বলেছেন, ‘আশা করি দ্রুত এই বিপর্যয় কেটে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ প্রবল বন্যার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পাকিস্তানের খাদ্য ভাণ্ডার। সেই কারণে ভারত থেকে সবজি এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে পারে পাকিস্তান, এমনটাই জানিয়েছেন সেদেশের অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইল।