OPINION সাহস আছে মমতার!

0
101

আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনি জননেত্রী। মানুষের কাছে জবাবদিহি করার তাগিদ আছে তাঁর। আর সে কারণে যদি তাঁকে গদি ছাড়তে হয় তাতেও কিছু যায় আসে না। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি যে কতটা কঠোর হতে পারেন গত কয়েকদিনে তা বুঝে গিয়েছেন বাংলার আমজনতা। সদ্য মিটেছে লোকসভার ভোট। কার্যত বিজেপির কোমর ভেঙে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯।

কিন্তু তারপরও উল্লাসে না মেতে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন আয়নার সামনে। আত্মতুষ্টি নয়, করেছেন আত্মসমালোচনা। এটা না করতেই পারতেন মমতা। বরং লোকসভায় দলের জয়কে অনেক বড় করে দেখানোর সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। বলতেই পারতেন মোদী, অমিত শাহরা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেও বাংলায় তাঁর ভোট ব্যাংকে এতটুকু ফাটল ধরাতে পারেননি। টানা তিনবার তিনি ক্ষমতায় থাকার পরও তৈরি হয়নি অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর।

কিন্তু না, এসব তিনি কিছুই করেননি। বরং দলের নেতাদের দাঁড় করিয়েছেন আয়নার সামনে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানুষের জন্য পরিষেবা না দিলে সে যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাঁকে ছুড়ে ফেলতে তাঁর একমুহূর্ত সময় লাগবে না। কোনও লুকোচুরি নয়, টিভি ক্যামেরা অন রেখেই নবান্নের সভাঘর থেকে বার্তা দিয়েছেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে তোলাবাজি। না হলে কাউকেই তিনি রেয়াত করবেন না। দলের কাউন্সিলর হোক কিংবা কোনও পুলিশ আধিকারিক, টাকা তোলার অভিযোগ এলেই গ্রেপ্তার করিয়ে দেবেন তাঁকে। মমতা এই বার্তা দেওয়ার পরেই শিলিগুড়িতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা দেবাশিস প্রামাণিক।

তিনি ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি ব্লক কমিটির সভাপতি। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বেআইনি জমি কারবারের বহু অভিযোগ রয়েছে। দেবাশিসের গ্রেফতারি উল্লেখ করে মমতা সজাগ করে দিয়েছেন বাকিদের। স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ, বেআইনি পার্কিং থেকে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ এলেই কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাঁর নির্দেশ পেয়েই পুলিশ প্রশাসন যে বুলডোজার চালিয়ে হকার উচ্ছেদ করবে এমনটাও যে নয় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুঝিয়ে দিয়েছেন বুলডোজার সংস্কৃতি উত্তরপ্রদেশের হতে পারে বাংলার নয়। আর তাই হকার ইউনিয়নগুলিকে ডেকে বুঝিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে সমাধানের পথ খুঁজতে বলেছেন। একজন হকারের একটি ডালা থাকবে একাধিক নয়। এভাবেই তিনি সমাধানের রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছেন। বলেছেন, ভেন্ডিং এবং নন ভেন্ডিং জোন চিহ্নিত করতে হবে। বেআইনি পার্কিং তুলে দিয়ে কোথায় বৈধ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় সেটাও খতিয়ে দেখতে বলেছেন। বলে দিয়েছেন ১ মাস সময় দেওয়া হল। তার মধ্যে কোনও হকারকে উচ্ছেদ করা হবে না। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রাস্তা থেকে ডালা সরিয়ে নিতে হবে।

শুধু তাই নয়, পুলিশ যে সমস্ত হকারের দোকানপাট ভেঙে দিয়েছে, তাদেরও কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একেই বলে রাজধর্ম। নিজের অন্যায়, ব্যর্থতাকে বেমালুম চেপে গিয়ে শুধু গদি আঁকড়ে বসে থাকলেই হয় না। সেক্ষেত্রে তাঁর পরিচয় হয় শুধুই শাসক। কখনওই হতে পারেন না জননেতা বা জননেত্রী। মমতাকে দেখে মোদী কিংবা অমিত শাহের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

কেন্দ্রে সরকারে বসার সঙ্গে সঙ্গে তিনটে বড় কেলেঙ্কারি মাথার উপর চেপে বসেছে। শরিকদের ক্রাচে ভর করে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা মোদীর ডিকশনারিতে অবশ্য আত্মসমালোচনা বলে কোনও শব্দ নেই। মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে জানেন না তিনি। গত ১০ বছরে তিনি যে ভুল করেছেন তার একটির জন্যও নতমস্তকে দেশবাসীর কাছে তিনি ক্ষমা চাননি। হয়তো ভাবেন এতে তাঁর ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মোদীবাবুর জানা উচিত, জনস্বার্থ বিরোধী একের পর এক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে দিতে গিয়ে, দেশবরেণ্য মনীষীদের থেকে নিজেকে বড় করে দেখতে গিয়ে, নিজেকে স্বয়ং দেবতার অংশ ভাবতে গিয়ে, যে ইমেজ নিয়ে এত বড়াই তাঁর, সেই ইমেজ অনেক আগেই নষ্ট করে ফেলেছেন তিনি। এখন তাঁর একটাই শিক্ষা নেওয়া বাকি, মমতাকে দেখে মোদী অন্তত শিখুন, কীভাবে জননেতা বা জননেত্রী হয়ে উঠতে হয়!

Previous articleWeather Update শনি ও রবি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা সহ একাধিক জেলায়,তাপমাত্রা কমবে আরও ২-৩ ডিগ্রি! জানাল আলিপুর
Next articleCJI DYChandrachud বিচারপতিকে ভগবান ভাবলে বিপদ !মন্তব্য প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here