
মাত্র ২৫ মিনিটের অপারেশন সিঁদুর। আর এই ২৫ মিনিটের অভিযানেই ধ্বংস করা হয়েছে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। নিকেশ করা হয়েছে একশোর বেশি জঙ্গিকে। বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকে জানালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিয়ান যে শেষ হয়ে যায়নি, সেই বার্তাও দিলেন রাজনাথ। এদিন সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা জানিয়েছে, এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার ও ভারতীয় সেনার পাশে রয়েছে তারা।

পহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) অভিযান করে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় হামলা করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত খবর ছিল, এই প্রত্যাঘাতে ৭০ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের সর্বদল বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) জানান, ১০০ জঙ্গি মারা হয়েছে! একই সঙ্গে তাঁর এও দাবি, অভিযান এখনও চলছে, পাকিস্তান পদক্ষেপ করলেও প্রতিরোধ হবে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল হওয়ার পরই বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে গেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরই সর্বদল বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। জানা গেছিল, এই বৈঠকে অভিযান সম্পর্কিত নানা তথ্য দেওয়া হবে। সরকারি সূত্রের খবর, বিরোধীদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় সেনা ১০০ জঙ্গিকে নিকেশ করেছে। তবে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। পাকিস্তান যদি হামলার চেষ্টা করে তবে তা রুখতে সেনা প্রস্তুত।’ সরকারিভাবে অবশ্য এখনও মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে হওয়া সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ-সহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। এছাড়া বিরোধী একাধিক দলের শীর্ষ নেতা, প্রতিনিধিরা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও তাঁর বার্তা সকলকে শোনানো হয়েছে। পাশাপাশি অভিযানের খুঁটিনাটি বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন রাজনাথ। সেখানে বলেছিলেন, ‘ভারত লক্ষ্যপূরণ করেছে। ভারতীয় সেনা হনুমানজির মত হামলা করেছে।’ পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে দেন, ‘যারা নির্দোষদের হত্যা করেছে, শুধু তাদের ওপরেই হামলা করা হয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করেছে ভারত। ভারতীয় নাগরিকরা সেনার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
ত্রিস্তরীয় এই সামরিক অভিযানে একযোগে আঘাত হানা হয় ৯টি কুখ্যাত জঙ্গিঘাঁটিতে। প্রতিটি জায়গারই অতীতে একাধিক বড়সড় সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। প্রথম থেকেই ভারত পহেলগাম হামলাকে পাকিস্তান-পোষিত সন্ত্রাস হিসেবেই দেখেছে এবং তারই জবাব হিসেবে লস্কর সংগঠন ও তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর লজিস্টিক, প্রশিক্ষণ ও কম্যান্ডো অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ করেছে।

এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনাথ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের তরফে ছিলেন লোকসভায় তাদের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা বলে, এই ইস্যুতে কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাকে তারা সমর্থন জানাবে। তাদের বক্তব্য, এখন প্রশ্ন তোলার সময় নয়। যখন প্রশ্ন তোলার সময় হবে, তখন প্রশ্ন তোলা হবে। কংগ্রেস বলে, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থাকলে ভাল হত। মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, তাঁরা সবাই সরকারের সঙ্গে রয়েছেন।

এদিকে পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরে পাকিস্তানে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতের পর দেশের বিমানবন্দরগুলিতে অতি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। দ্য টাইমনস অফ ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদন বলছে, উত্তর, মধ্য এবং পশ্চিম মিলিয়ে দেশের প্রায় ২৭টি বিমানবন্দর ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ মে অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত বিমানবন্দরগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বৃহস্পতিবার ৪৩০টি বিমানও বাতিল করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলছে, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, আকাসা এয়ার এবং বেশ কয়েকটি বিদেশি বিমান সংস্থা দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরগুলি থেকে তাদের বিমান বাতিল করেছে। ভারতের বিমান সংস্থাগুলি মোট ৪৩০টি বিমান বাতিল করেছে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর দেশের ১৭টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিমান সংস্থাগুলিও একের পর এক বিমান বাতিল ঘোষণা করে। তবে এই প্রত্যাঘাতের আবহে বিশেষ করে উত্তর, পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের বিমানবন্দরগুলি নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য বলছে, এই সামরিক অস্থিরতার পরিস্থিতিতে ভারতের পশ্চিম প্রান্ত বিশেষ করে কাশ্মীর থেকে গুজরাত পর্যন্ত এই আকাশপথে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলির বিমানগুলিও পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে নামছে। সূত্রের খবর, এই সামরিক অস্থিরতার পরিস্থিতিতে ভারতের যে বিমানবন্দরগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে সেগুলি হল— শ্রীনগর, জম্মু, লেহ, চণ্ডীগড়, অমৃতসর, লুধিয়ানা, পটিয়ালা, ভাতিন্ডা, হলওয়ারা, পঠানকোট, ভুন্তর, শিমলা, গগ্গল, ধর্মশালা, কিশনগড়, জৈসলমের, জোধপুর, বিকানের, মুন্দ্রা, জামনগর, রাজকোট, পোরবন্দর, কান্ডলা, কেশোদ, ভুজ, গ্বালিয়র এবং হিন্ডন বিমানবন্দর।
