ভোটে গরম বাংলায় রবিবাসরীয় প্রচারে ফের উত্তরবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট রয়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। তার আগে আজ উত্তরের প্রার্থীদের সমর্থনে ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী মোদী। ধূপগুড়ির সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছতেই চারদিক থেকে ‘মোদী… মোদী’ ধ্বনি উঠতে শুরু করে। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ বাংলার পদ্ম শিবিরের তাবড় রথী-মহারথীরা।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির সভা থেকে বাংলায় সব বুথে তৃণমূলের জামানত জব্দ করার ডাক দিলেন নরেন্দ্র মোদী। দলের বিজয় সংকল্প সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিএমসি-র লোকেরা ধরে নিয়েছে তারাই শেষ কথা। লোকসভা নির্বাচনে ওদের মুখের উপর জবাব দিতে হবে। স্পষ্ট বাংলায় বলেন, ‘ভয় পাবেন না। পদ্মফুলে ছাপ দেবেন।’
নাম না করে ভূপতিনগরে এআইএ-র উপর হামলার ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির লোকেরা আক্রান্ত হচ্ছে। টিএমসি-কে এবার তাই সবক শেখাতে হবে।’
১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুলি এবং আলিপুরদুয়ার আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে শেষের দুই আসনে অন্যতম ইস্যু চা বাগান। প্রধানমন্ত্রী চা শিল্প এবং বাগান শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন। বলেন, তৃণমূল পার্টি ও সরকারের কারণে বহু চা বাগান বন্ধ। জনতার উদ্দেশে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘আপনারা এর জবাব চাইবেন কি চাইবেন না। তৃণমূলকে সবক শেখাবেন কী শেখাবেন না?’
প্রধানমন্ত্রী রবিবারও সন্দেশখালি নিয়ে সরব হন। বলেন, গোটা দেশ আজ সন্দেশখালির ঘটনা জানে। সেখানে মা-বোনদের উপর চরম অত্যাচার হয়েছে। তৃণমূলকে এজন্য উচিত শিক্ষা পেতে হবে। তৃণমূলের বিরুদ্ধ সিন্ডিকেটরাজ কায়েমের অভিযোগও করেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদী জলপাইগুড়ির সভা থেকেও ফের বলেন, ‘আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডি যে তিন হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করেছে সেই টাকা ভুক্তভোগীগের ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা।’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘৪ জুনের পর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’ ওই দিন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হবে। মোদী আগেই দাবি করেছেন, চারশোর বেশি আসনে জিতে তিনিই ফের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
জলপাইগুডড়িতে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দীর্ঘায়িত করেননি। মিনিট পনেরোর ভাষণে বলেন, কংগ্রেস-তৃণমূল-বাম সব এক জোট। ওরা ইন্ডি জোট গঠন করেছে। এরপর বাংলায় বলেন, ‘আমি বলছি ভ্রাষ্টাচার হঠাও। ওরা বলছেন, ভ্রষ্টাচারীদের বাঁচাও।’
জলপাইগুড়িতে এসে বিকশিত ভারতের কথা শোনা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কণ্ঠে। তিনি প্রতি মুহূর্ত দেশের জন্য কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন। এদিন মোদী বলেন, ‘বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণের জন্য আমার সব সময় দেশের জন্য। আমি ২৪ ঘণ্টা ২০৪৭-এর জন্য কাজ করছি। এটা আমাদের সকলের সংকল্প। আমার বিশ্বাস আমরা সকলে মিলে বিকশিত ভারত অবশ্যই বানাব।’
এদিন নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘গত ১০ বছরে NDA সরকার মা-বোনেদের জীবন উন্নত করেছে। যাঁদের কাছে গ্যাস ছিল না , শৌচালয় ছিল না তাঁদের মধ্যে এসসি-এসটিদের একটা বড় সংখ্যার জনতা ছিল। আপনারা আমাদের সুযোগ দেওয়ায় আমরা এসসি-এসটিদের উন্নয়নের জন্য যাবতীয় কাজ করেছি। তাঁদের বাড়ি পাকা করে দেওয়া, শৌচালয় তৈরির কাজ হয়েছে। আদিবাসী মন্ত্রকের বাজেটও বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ এদিন মোদী বলেন, ‘রাজ্যে ED-র বাজেয়াপ্ত করা ৩০০০ কোটি টাকা গরিব মানুষদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
পাশাপাশি তৃণমূলকে আক্রমণ করেন তিনি। নিশানায় ছিল INDIA জোটও। উত্তরবঙ্গে ঢালাও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে জি২০ সম্মেলন হচ্ছে। রেল যোগাযোগ যেমন বেড়েছে তেমন সড়ক তৈরি হয়েছে। কেন্দ্র মজবুত সরকার থাকলে উত্তরবঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে।’
জলপাইগুড়ির ঝড়ে যে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সেই প্রসঙ্গও শোনা যায় মোদীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে জলপাইগুড়িতে ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতরা যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন সেই কামনা করছি।’
এদিন মোদী বলেন, ‘দশ বছরে যা উন্নয়ন হয়েছে তা ট্রেলার মাত্র’। এই লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে এসে নরেন্দ্র মোদীর কণ্ঠে একাধিকবার গ্যারান্টি প্রসঙ্গ শোনা গিয়েছে। ফের একবার এই নিয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছেন। নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘বাংলাতে সিন্ডিকেট রাজ চলছে। যাঁরা দুর্নীতি করছেন তাঁদের জেলে থাকতে হবে। এটাই মোদীর গ্যারান্টি।’
সবমিলিয়ে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের পাশাপাশি তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধীদের আক্রমণ করতে দেখা গেল নরেন্দ্র মোদীকে। এর আগেও রাজ্যে এসে ৩০০০ কোটি টাকা নিয়ে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছিলেন মোদী। তা নিয়ে পালটা সুর চড়িয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ফের একবার মোদীর কণ্ঠে ED-র বাজেয়াপ্ত করা ৩০০০ কোটি টাকার প্রসঙ্গ শোনা গেল। সঙ্গে ‘লুঠের টাকা’ গরিব মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও শোনা গেল মোদীর কণ্ঠে।