দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতি বন্ধে এবার রাজ্য সরকার নিয়মিত নজরদারির সিদ্ধান্ত নিল। এ কাজে নবান্ন ডিভিশনাল কমিশনার, জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং বিডিওদের কাজে লাগাতে চায় নবান্ন। তৈরি করা হয়েছে পোর্টালও। যার মাধ্যমে তারা সরকারি নির্দেশ মতোই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে চালু বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে রিপোর্ট পেশ করবেন।
এর ব্যবস্থা চালু হলে নবান্ন থেকেই সারা রাজ্যে নজরদারি সম্ভব হবে। শুক্রবার রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব পি উল্গানাথন ডিভিশনাল কমিশনার ও জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। এই চিঠিতে পরিদর্শনের কাজ নিয়ে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে কোন পদ মর্যাদার আধিকারিককে কী করতে হবে? প্রত্যেককেই পোর্টালের মাধ্যমে সময়মতো রিপোর্ট জমা দেওয়ার কাজ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত সহ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় নজরদারি নিশ্চিত করতে চায় রাজ্য সরকার।
ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ বিশেষ করে ১০০ দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প নিয়ে বিস্তর ‘ভুযো খরচের’ অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গত আর্থিক বছরেই এই প্রকল্পে কাজ করার জন্য শুধু মজুরি বাবদই ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা রাজ্যের। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাস কেটে গেলেও এই প্রকল্প থেকে এক পয়সা পাওয়া যায়নি৷
উপরন্তু পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খরচ নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে অফিসার পদমর্যাদার আধিকারিকদের প্রতিনিধিদল রাজ্যে পরিদর্শনে পাঠানো হয়। প্রায় এক মাস ধরে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিটি জেলায় ঘুরে রিপোর্ট দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে। রাজ্যকেও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বেআইনি খরচের কথা জানিয়ে থানায় এফআইআর করা এবং এই টাকা উদ্ধারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলা হয়েছে। এ জন্য সোশ্যাল অডিট করে চলতি সেপ্টম্বরের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তারা রাজ্যকে নজরদারির পরমার্শ দিয়েছিল।
এর প্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার একগুচ্ছ প্রসাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নজরদারির জন্য এই নয়া ব্যবস্থা চালু করল। লক্ষ্য পঞ্চায়েতে চালু প্রকল্প রূপায়ণে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানো। সরকারি গাইড লাইন মেনে বরাদ্দ টাকা ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কিনা নজরদারি চালানো। অবশ্যই করে দেখতে প্রকল্প রূপায়ণে রেকর্ড যথাযথ সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা।
এই প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তার সমাধানও করতে।চিঠিতে পঞ্চায়েত সচিব জানিয়েছেন, মাসে একটি করে জেলা পরিষদের চালু বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের কাজ পরিদর্শন করতে হবে ডিভিশনাল কমিশনারদের। এই কাজ রূপায়ণ নিয়ে কোনও অভিযোগ পাওয়া গেলে তার সত্যতা খতিয়ে দেখে সমাধান করতে হবে। পরিদর্শনের পরই তা পোর্টালের মাধ্যমে জানাতে হবে।
জেলাশাসককে একই ভাবে মাসে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে চালু প্রকল্প রূপায়ণের কাজ পরিদর্শন করতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসকদের জন্যও একই রুটিন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বা মহকুমার ডেপুটি কন্ট্রোলারকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বিডিও ও জয়েন্ট বিডিওদের মাসে তিনটি করে গ্রাম পঞ্চায়েত পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে হবে।
চিঠিতে পঞ্চায়েত সচিব জানিয়েছেন, মাসে একটি করে জেলা পরিষদের চালু বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের কাজ পরিদর্শন করতে হবে ডিভিশনাল কমিশনারদের। এই কাজ রূপায়ণ নিয়ে কোনও অভিযোগ পাওয়া গেলে তার সত্যতা খতিয়ে দেখে সমাধান করতে হবে।
পরিদর্শনের পরই তা পোর্টালের মাধ্যমে জানাতে হবে। জেলাশাসককে একই ভাবে মাসে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে চালু প্রকল্প রূপায়ণের কাজ পরিদর্শন করতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসকদের জন্যও একই রুটিন।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বা মহকুমার ডেপুটি কন্ট্রোলারকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বিডিও ও জয়েন্ট বিডিওদের মাসে তিনটি করে গ্রাম পঞ্চায়েত পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে হবে।
নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, এর নেপথ্যে কেন্দ্রের গুঁতোও একটা কারণ। কেন্দ্রের অনুদানে চলা প্রকল্পের টাকা একাংশ পঞ্চায়েতে লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ। হিসাবে গরমিল থাকায় কেন্দ্র তাই সাময়িক ভাবে বরাদ্দ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
নবান্নের এক কর্তার কথায়, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ রাজ্যের সামনেও নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই কালক্ষেপ না করেই সংস্কারে হাত দিয়েছেন। এ হেন সংস্কার বাংলায় গত বিশ বছরে হয়নি। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, সরকারি কোষাগারের টাকার অপচয় বন্ধ করা। সেই সঙ্গে গ্রামের মানুষকে তা প্রাপ্য টাকা বুঝিয়ে দেওয়া।
বস্তুত গ্রাম ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে তৃণমূলের জনভিত্তি মজবুত। কিন্তু অতীতে দেখা গিয়েছে, আমফানের ত্রাণের টাকা লুঠ বা পঞ্চায়েতে একাংশ নেতার কাটমানির খাওয়ার প্রবণতার কারণে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর তাই দুর্বল হয়েছে তৃণমূল।
সূত্রের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, মানুষকে ফের তাঁর অধিকার বুঝিয়ে দিতে পারলে চলতি ঝড়ও মোকাবিলা করা যাবে। অর্থাৎ একাংশ নেতার দুর্নীতির জন্য তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে যে আঁচ পড়েছে তা থেকে ফের আলোর পথে হাঁটা যাবে। এখন চ্যালেঞ্জ একটাই, তা হল কত দ্রুত এই সংস্কার বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে। নবান্ন সূত্রের মতে, গত সপ্তাহ খানেকের কাজের গতি দেখলেই বোঝা যাবে এ ব্যাপারে কোনও বিলম্ব চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একদা যেমন বলেছিলেন ডু ইট নাও, এখন এ ব্যাপারে নবান্নের চোদ্দ তলার মনোভাবও তাই।