মনে হওয়া স্বাভাবিক, এই করোনা-কালে যদি বেঁচে থাকতেন, তা হলে মাদার কী করতেন? মানবসেবাই যাঁর জীবনের মূলমন্ত্র, তিনি কি এই সময়ে নিজেকে ঘরবন্দি করে থাকতে পারতেন? দরজা খুলে সকলের সেবায় লগ্ন হতেন না কি?
আর এখন মনে হচ্ছে, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, ইউক্রেনে এখন যা চলছে তা হত? তিনি কি উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে নির্ভয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতেন না, তিনি এখানে মানুষের সেবা করবেন, তোমাদের ক্ষমতা থাকে তো বাধা দাও? তিনি তো বরাবর সেটাই করেছেন। বন্দুক চিরকালই তাঁর সামনে মাথা নীচু করেছে ৷
আজ এসব আরও মনে হচ্ছে, কারণ আজই ২৬ অগস্ট। মাদারের শুভ জন্মদিন। তাঁর নাম মেরি টেরিজা বোজাঝিউ। ১৯১০ সালের আজকের দিনে জন্ম। ছিলেন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক। টেরিজার জন্মস্থান আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আসেন। জীবনের বাকি সময়টা তিনি ভারতেই থেকে যান।
১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালে মাদার কলকাতায় মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালীঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র। পরবর্তীতে মাদার এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নির্মল হৃদয়’। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস মাদারকে ‘সন্ত’ স্বীকৃতি দেন।
তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। কিন্তু পুরস্কারের নিগড়েই আবদ্ধ নয় তাঁর জীবন ও কর্ম, তাঁর ব্য়ক্তিত্ব ও ব্যাপ্তি।
মাদার অবশ্য একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্বই ছিলেন। মৃত্যুর আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের দ্বারা তিনি যুগপত্ নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন। কেউ মাদারকে ‘ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী’ বলেছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিও জন্মনিরোধক এবং গর্ভপাতের বিষয়ে তাঁর আপত্তি, দারিদ্র্যের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যে তাঁর বিশ্বাস এবং মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার কাজের সমালোচনা করেছেন। এমনকী দানের অর্থের অস্বচ্ছ ব্যয় বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মাদার সব হাসিমুখে সহ্য করতেন।
আদ্যন্ত ঈশ্বরপ্রাণিত মানুষটি কিন্তু একটা সময়ে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসও হারিয়েছিলেন। দৈনন্দিন জীবনে নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে খ্রিস্টধর্মের সমস্ত আচার পালন করলেও, মাদারের চিঠিপত্র থেকে জানা যায় তার জীবনের শেষ পঞ্চাশটি বছর মাদার তাঁর অন্তরের অন্তস্থলে ইশ্বরের অস্তিত্ব তেমন করে অনুভব করেননি। আর তাই ইশ্বরের অনুপস্থিতিতে তিনি তীব্র হাহাকার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ঈশ্বর তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন! খুবই মর্মান্তিক এই আত্মযুদ্ধ। এহেন বর্ণিল বিচিত্র মানুষটির মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
মাদার টেরেসার (Mother Teresa) ১১২-তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত সংস্থা মিশনারিজ অফ চ্যারিটিতে শুরু অনুষ্ঠান।
West Bengal | Missionaries of Charity, a congregation in Kolkata, commemorates the 112th birth anniversary of its founder Mother Teresa pic.twitter.com/JUK4Cb4CZo
— ANI (@ANI) August 26, 2022