দেশেরসময় : রমজানের প্রথম দিনের সন্ধেতে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশের দিকে তাকাতেই অদ্ভুত এক সুন্দর দৃশ্য দেখা গেল। এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা। চাঁদের ঠিক নীচে জ্বলজ্বল করছে শুক্র।
সূর্য ডুবতেই সেই দৃশ্যের সাক্ষী হল অনেকেই। পশ্চিম আকাশে উঠেছে সরু এক ফালি চাঁদ। আর তার গায়ে এক আলোর বিন্দু। এমন দৃশ্য কবে দেখা গিয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। সন্ধ্যাপ্রায় ৬ টা পর্যন্ত সেই আলোর বিন্দু একেবারে চাঁদের কাছেই অবস্থান করছিল। পরে দেখা যায়, আস্তে আস্তে সেই বিন্দু চাঁদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তা দেখে এদিন খমকে যান পথ চলতি মানুষ। কলকাতা সহ রাজ্যের প্রায় সব জায়গা থেকেই সেই দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
এই দৃশ্য দেখতে সকলেই বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। আবার কেউ কেউ উঠে পড়েন বাড়ি বা অফিসের ছাদে। খালি চোখে দেখা গেল এই মহাজাগতিক মহামিলন। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে বাংলা জুড়ে ৷
সৌরমণ্ডলের জাঁদরেল গ্রহ শুক্র ও পৃথিবীর উপগ্রহ এক লাইনে দেখতে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এদের কক্ষপথ আলাদা, কক্ষপথের গতি, সূর্য থেকে দূরত্ব আলাদা। তাই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে ঠিক কোন সময়টাতে এরা একই সঙ্গে কাছাকাছি ধরা দেবে সেটা বলা সম্ভব নয়। কখনও এই সংযোগ হতে ৪০০ বছর পেরিয়ে যায়, তো কখনও আরও বেশি। যখন সেই সংযোগ ঘটে সেই সময়টাকেই বিরলতম মুহূর্ত হিসেবে ধরেন বিজ্ঞানীরা।
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি স্পেস অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সের ডিরেক্টর দেবী প্রসাদ দুয়ারী জানিয়েছেন, আসলে চাঁদের কাছে যে উজ্জ্বল বিন্দু দেখা যাচ্ছে, তা হল শুক্রগ্রহ। পৃথিবীর নিরিখে মনে হচ্ছে যেন শুক্রের কাছে চলে এসেছে চাঁদ। তিনি জানিয়েছেন, এদিন কলকাতার স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যে অবস্থানে ছিল শুক্রগ্রহ, তা দেখে মনে হচ্ছিল যেন চাঁদ চাপা দিয়ে দিয়েছে শুক্রকে। তারপর আস্তে আস্তে শুক্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। ফলে দেখে মনে হচ্ছে ওই উজ্জ্বল বিন্দু দূরে চলে যাচ্ছে।
‘চাঁদ, পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে বলে, আমরা দেখি আকাশের গায়ে চাঁদ ক্রমশ পূর্বদিকে সরে যাচ্ছে। এই সরে যাওয়ার পথেই আজ চাঁদ আড়াল করে ফেলল শুক্রকে। আর যে জায়গা থেকে এই আড়ালের পথটা মিলে গেছে সেখান থেকেই দেখা যাবে চাঁদের আড়াল বা Lunar Occultation।’
তিনি আরও জানান করেন, ‘এদিন বিকেল ৪:৪৩ নাগাদ শুক্রকে চাঁদ ঢেকে দেয়। কিন্তু সেই সময় আকাশে সূর্যের উপস্থিতি থাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। তবে সন্ধেবেলা কলকাতার আকাশ পরিষ্কার থাকায় এই দৃশ্য দেখা গেছে।’
কতদিন বাদে আবার এমন দৃশ্য দেখা যাবে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন দেবীপ্রসাদ দুয়ারি। তিনি জানিয়েছেন, নিজের নিজের কক্ষপথে চলতে চলতে এভাবে গ্রহ বা নক্ষত্রের অবস্থান বদলায়। এটা তেমনই একটি ঘটনা। তাই আবার কবে দেখা যাবে, তা বলা সম্ভব নয়।