দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রথম দফায় বর্ষার মরশুমে বন্যায় ভাসল উত্তর ভারত। যমুনা নদীর জলস্তর বেড়ে বানভাসি দিল্লি। হিমাচল প্রদেশে দফায় দফায় হড়পা বানের পাশাপাশি পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, জম্মু কাশ্মীর পেল প্রবল বৃষ্টিপাত। এই দুর্যোগ কাটতে না কাটতেই এবার নতুন দফার বর্ষা শুরু হচ্ছে দেশে। এই পর্বে কেমন থাকবে রাজ্যগুলির আবহাওয়া?
বাংলায় একদিকে বৃষ্টি, একদিকে ঘাম! দক্ষিণবঙ্গে সেই একই আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি, অন্যদিকে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি।
সোমবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। আজ সারাদিন কলকাতার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে বলে জানানো হয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তরফে। বিক্ষিপ্ত ভাবে সারা দিনই বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়। সেই সঙ্গে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিও পোহাতে হবে কলকাতাবাসীকে। তবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলবে বৃষ্টি। দক্ষিণবঙ্গে আপাতত এমনই আবহাওয়া চলবে বলে আলিপুর সূত্রে খবর ।
আজ, সোমবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, তবে আগামী ২৪ ঘণ্টা পরে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় যদি অস্বস্তি হবে। ২৪ ঘণ্টা পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
আজ কলকাতায় মূলত মেঘলা আকাশ। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা দিনভর। তবে বৃষ্টি হলেও জলীয় বাষ্পের কারণে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থাকবে। কলকাতায় আজ সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৬৫ থেকে ৯৪ শতাংশ।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ওপরের পাঁচ জেলায় একটানা বৃষ্টি চলবে। ২৪ ঘণ্টা পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে উত্তরেও। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
এসবের মধ্যেই আগামী কাল, মঙ্গলবার আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। মৌসুমী অক্ষরেখা গঙ্গানগর, নাড়নাউল, গোয়ালিয়ার চুর্ক এবং এরপর ঝাড়খণ্ডের নিম্নচাপ এলাকার মধ্যে দিয়ে ওড়িশার বালাসোরের উপর দিয়ে দক্ষিন-পশ্চিম দিকে গিয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে পর্যন্ত বিস্তৃত।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মূলত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, এই জোড়া ফলায় বানিভাসি হয়েছে একাধিক রাজ্য। এবার শুরু হতে চলেছে দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা পর্ব।
এবার ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে ওডিশা এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে। যার জেরে আগামী পাঁচদিনের মধ্য এবং পূর্ব ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত হবে। তবে হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে এখনই বৃষ্টি থামার কোনও সম্ভাবনা নেই। আরও দু’দিন সেখানে দুর্যোগ চলবে।
IMD-র সূত্রে জানা গেছে, “আগামী এক সপ্তাহ মধ্য ভারতে বর্ষার দাপট অব্যাহত থাকবে। একটি নিম্নচাপ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তৈরি হবে একটি ঘূর্ণাবর্ত। এই জোড়া ফলায় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা।” তবে আবহাওয়াবিদরা আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের এই বৃষ্টিপাত ঘাটতি অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
অন্য দিকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়, মধ্য মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও গুজরাট রাজ্যে। অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে আগামী পাঁচ দিন। কঙ্কন ও গোয়া উপকূলে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা। কর্নাটক, কেরল, মাহেতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
এদিকে, ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এল নিনো ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব বিস্তার করা শুরু করবে ভারতে। ফলে বর্ষা দফায় দফায় বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। জুন মাসের ১ তারিখ থেকে বৃষ্টির অনেকটাই ঘাটতি দেখা গিয়েছে।
নতুন পর্বের এই বর্ষায় নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের জেরে বৃষ্টিপাত হবে ওডিশা, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গে। এমনটাই মনে করছেন স্কাইমেট ওয়েদার সার্ভিসের সহ সভাপতি মহেশ পালাওয়াত। তিনি বলেন, “এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে যুক্ত হবে গুজরাটে।
সেখান থেকে বৃষ্টিপাত নেমে আসবে রাজস্থান, গুজরাটে। পাকিস্তানের উপরেও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে। সেটিও এই জোড়া ফলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানাতে দুর্যোগের পরিস্থিতি তৈরি করবে।” আবহাওয়া বিজ্ঞানী এম রাজিবনের ব্যাখ্যা, “এল নিনোর বছর মানেই যে বর্ষা দুর্বল হবে এমনটা নয়। ১৯৮৭ সালের মতো সবচেয়ে দুর্বল বর্ষার বছরেও কিছুদিন ভারী বৃষ্টি পেয়েছ দেশের একাধিক রাজ্য।”