দেশের সময়, মছলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা: পঞ্চায়েত ভোটের আগে আক্রান্ত তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরে তৃণমূলের তরফে একটি বাইক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূলের কর্মীদের উপর একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আর এরই প্রতিবাদে এদিন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা।
ঘটনাটি ঘটেছে মছলন্দপুরের বসিরহাট রোডের বামনডাঙা এলাকায়। ঘটনায় গোষ্ঠীকোন্দলের একটি তত্ত্বও উঠে আসছে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এমন কোনও অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে। বরং বিরোধী শিবিরের দিকেই এই হামলায় দায় ঠেলেছে তারা
তৃণমূলের অভিযোগ, হামলা চালিয়েছে বিজেপি ৷ বিজেপির পাল্টা দাবি, গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে হামলা হয়েছে তৃণমূলের মিছিলে। হামলার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলকর্মীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পাশাপাশি স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও তাঁর ভাইয়ের উপর হামলার পর মঙ্গলবার থেকেই তেতে উঠেছিল ঠাকুরনগর। ব্যবসায়ীর উপর হামলার পরেই পিটিয়ে মারা হয় পার্থ সমাদ্দার নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনার পরেই গাইঘাটা অশান্ত হয়ে ওঠে। বুধবার তৃণমূলের মিছিল ঘিরে আরও একবার তেতে উঠল মছলন্দপুর এলাকা।
তৃণমূলের দাবি, বুধবার তাঁরা মছলন্দপুরে বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বাইক মিছিল বের করেছিল। তখন কয়েকজন তাঁদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। গাইঘাটা দক্ষিণ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি তাপস ঘোষ জানান, বাইক মিছিলে থাকা তৃণমূলকর্মীদের পথ আটকে ছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী।
শুনেছি, তাঁদের হাতে অস্ত্র ছিল। ছয়-সাতজন জখম হয়েছেন। এরা সকলেই বিজেপি কর্মী। এলাকাকে অশান্ত করতে চাইছে। বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি স্বপনকুমার বিশ্বাসের পাল্টা বক্তব্য, পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই অশান্তি। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।
এদিকে ঠাকুরনগরের আক্রান্ত ফল ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন মজুমদার ও তাঁর ভাই সুরঞ্জন বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের উপর হামলা চালানোর জন্য পুলিশ তন্ময় ঘোষাল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে পার্থ সমাদ্দারের মৃত্যুর ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই দুটি ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে গাইঘাটায়।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে গোবরডাঙা থানার পুলিশ, হাবরার আইসি ও হাবরার এসডিপিও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কে বা কারা, এই হামলার সঙ্গে যুক্ত, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে বুধবারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উস্কে দিয়েছে বিজেপি শিবির। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা, খোঁজখবর নিয়ে তারপর বিস্তারিত বলা যাবে। তবে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও এখানে ঘটনা নেই বলেই দাবি স্থানীয় নেতৃত্বের। বলছেন, “আমরা সবাই তৃণমূল। যাঁরা করেছে, আমার বিশ্বাস তারা আমাদের বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ হবে। নাহলে, তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে থাকা অবস্থায় মানুষদের উপর কেন হামলা হবে?”
এদিকে বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, কাটমানিকে কেন্দ্র করেই এখানে তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিজেপি নেতা স্বপন কুমার বিশ্বাস বলছেন, “এখানে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। আগামী পঞ্চায়েতের টিকিট নিয়ে লড়াইয়ের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। মছলন্দপুরে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী আছে, এটি সবাই জানে।” যদিই এই ধরনের কোনও অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। উল্টে, বিরোধীদের দিকেই আঙুল তুলছে শাসক শিবির।