দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিদায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন মনমোহন সিংয়ের। তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রাক্তনের শেষকৃত্যে উপস্থিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগাগোড়া উপস্থিত গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। শেষকৃত্যে কাঁধ দিলেন রাহুল গান্ধী। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ে মাথায় রুমাল বেঁধে মনমোহনের দেহ কাঁধে তুলে নিতে দেখা যায় তাঁকে।
কংগ্রেস হেডকোয়ার্টার থেকে সুসজ্জিত গাড়িতে মনমোহন সিংয়ের মরদেহ শনিবার নিয়ে যাওয়া হয় নিগমবোধ ঘাটে।
দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট নাগাদ বোলে সো নিহাল, সৎশ্রী অকাল ধ্বনিতে মনমোহনের চিতায় আগুন দিলেন তাঁর কন্যা। তার আগে মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানাতে নিগমবোধ ঘাটে উপস্থিত হন ভূটানের রাজা জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং মরিশাসের বিদেশমন্ত্রী মণীশ গোবিন। উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা, রাজনাথ সিং, অমিত শাহ-সহ অন্যরা।
শনিবার সকালে কংগ্রেস সদর দফতর থেকে রওনা দিয়ে মনমোহনের শববাহী গাড়ি লালকেল্লার পিছনে যমুনার তীরে নিগমবোধ ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়। গাড়ির সঙ্গেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সেবাদলের কর্মী ও তিন বাহিনীর জওয়ানরা তেরঙা জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিন নিয়ে আসেন।
সেখানে দেশ-বিদেশের নেতারা অন্তিম শ্রদ্ধা জানান ভারতের অর্থনীতির নবরূপকারকে। সমর্থকরা স্লোগান তোলেন মনমোহন সিং অমর রহে। এদিনের শেষযাত্রায় লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ শববাহী গাড়ির সঙ্গে হেঁটে আসেন শ্মশানঘাট পর্যন্ত।
সকাল থেকেই নিগমবোধ ঘাট পুলিশের দখলে ছিল। প্রচুর কংগ্রেস সমর্থক সহ সাধারণ মানুষও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে। দিল্লি পুলিশ পুরো ঘিরে ফেলা হয় নিগমবোধ ঘাটকে।
ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। কারণ মনমোহনের শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। তাছাড়া সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও হাজির ছিলেন শেষ পর্যন্ত। দিল্লি পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরা ইতিমধ্যেই নিগমবোধ ঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকিতে ছিলেন।
মনমোহনের শেষযাত্রার জন্য দিল্লির বিভিন্ন রাস্তায় সকাল থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। ভিভিআইপিদের যাত্রাপথে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে দেশে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ এই সাত দিন অর্ধনমিত থাকবে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পতাকা। একইসঙ্গে বাতিল থাকবে যে কোনও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। কংগ্রেসের তরফেও আগামী সাত দিন সমস্ত দলীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। সমস্ক কংগ্রেস ভবনে অর্ধনমিত রাখা হয়েছে দলের পতাকা।
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ প্রথমে দিল্লিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মনমোহন সিংয়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কংগ্রেসের হেড কোয়ার্টারে। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, কেসি বেণুগোপাল, সিদ্দারামাইয়া, ডিকে শিবকুমার, রেবন্ত রেড্ডি-সহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতারা। এ ছাড়াও অগুন্তি দলীয় কর্মী-সমর্থক মনমোহনকে শ্রদ্ধার্পণ করেন। ‘মনমোহন সিং অমর রহে’ স্লোগান উচ্চারিত হয়। ফুলে ঢাকা সুসজ্জিত গাড়িতে এর পর তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে। সেখানে প্রথমে শিখ ধর্মের নির্দিষ্ট রীতি মানা হলো। এর পর গান স্যালুটে বিদায় জানানো হলো ‘সর্দার’-কে।