দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবারও দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দত্তপুকুর স্টেশন। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় দীর্ঘক্ষণ ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন,বাংলায় এখনই চলবে না লোকাল ট্রেন।
এদিন মমতা বলেন, “অনেকে আমায় বলছেন, লোকাল ট্রেন চলছে না কেন। আমরা বলছি, এখনও টিকাকরণ হয়নি। গ্রামেগঞ্জে টিকাকরণের হার কম। কেন্দ্রীয় সরকার ভ্যাকসিন দিচ্ছে না। ফলে এখনই লোকাল ট্রেন চালালে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বুঝতে পারছি অনেকের কষ্ট হচ্ছে। আমরা বাস, অটো, মেট্রো চালাচ্ছি। তবে লোকাল ট্রেনের জন্য আরও কিছুদিন কষ্ট করতে হবে বন্ধু। আপনার জীবনের থেকে তো কোনও কিছুই দামি হতে পারে না।”
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা আরও বলেন, ‘অনেকেই আমাকে লোকাল ট্রেনের কথা বলছেন। কিন্তু আমি বলছি, গ্রামে এখনও ভ্যাকসিনেশন কমপ্লিট হয়নি। আমরা অনেক কম ভ্যাকসিন পাচ্ছি। তাছাড়া সেপ্টেম্বরে যেহেতু থার্ড ওয়েব আসছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা, সেই অনুযায়ী ভ্যাকসিনেশন বাড়ানো হবে।’ এরপরই মমতার সংযোজন, ‘লোকাল ট্রেন চলছে না বলে অনেকের সমস্যা হচ্ছে জানি। কিন্তু আপনার জীবনের থেকে দামি নয় কিছু। লোকাল ট্রেন নিয়ে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আরও ১৫ দিন বিধিনিষেধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, “আমি বুঝতে পারছি অনেকের কষ্ট হচ্ছে। আমরা বাস, অটো, মেট্রো চালাচ্ছি। তবে লোকাল ট্রেনের জন্য আরও কিছুদিন কষ্ট করতে হবে বন্ধু। আপনার জীবনের থেকে তো কোনও কিছুই দামি হতে পারে না।”
লোকাল ট্রেন নিয়ে নিত্যযাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। গতকালও উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে যাত্রী বিক্ষোভে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ ছিল রেল। তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরও অন্তত ১৫ দিন লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকবে। তিনি বলেছেন, লোকাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে রাজ্য সরকার তারাহুড়ো করতে চায় না।
এখনও পর্যন্ত রেল শুধুমাত্র স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে। যদিও আগের থেকে ট্রেনের সংখ্যা অনেক বাড়িয়েছে রেলকর্তৃপক্ষ। তবে তা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা কম।
তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, অগস্ট মাসটা লোকাল বন্ধই থাকবে। ৫০% ভ্যাকসিনেশন হলে লোকাল ট্রেন চালুর ভাবনা। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লক্ষ ভ্যাকসিনেশন করা হচ্ছে।’ এর আগেও মমতা বলেছিলেন, ‘এখন ট্রেন চালালে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তবে লোকাল ট্রেন আরও কতদিন বন্ধ থাকবে সে ব্যাপারে কিছু বলেননি মমতা। অন্য গণ পরিবহণ যেমন চলছে তেমনই চলবে। ৮০ শতাংশ টিকাকরণ হয়ে গেলে তারপর শুরু হবে লোকাল ট্রেন।
লোকাল ট্রেনের দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যাত্রীরা। লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয় একাধিক রেল স্টেশন। বিক্ষোভ ওঠাতে গেলে পুলিশকে তাড়াও করেন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও।
সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। এদিন মমতা আরও বলেন, ‘ট্রেন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহণে সে ভাবে সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, সব্জি-সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সড়ক পথে পরিবহণে ছাড় দেওয়া রয়েছে।’ তাছাড়া, মেট্রো, বাস, অটো, টোটো সমস্ত পরিষেবাই চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় গত ৬ মে থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। সে দিন থেকেই কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি চালু হয় রাজ্যে। পরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিললেও এখনও রাজ্যে বিধিনিষেধ চলছে। তবে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।