
দেশের সময় : ইছামতীকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা আলাদা আবেগ ও আন্তরিকতা আছে। তিনি সবসময় চান আবার আগের মতো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠুক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণের এই নদী। সেকারণে ইছামতীর বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই বনগাঁয় আসছেন নেত্রী। এমনটাই দাবি প্রবীণ তৃণমূল নেতা রতন ঘোষের।

তিনি বলেছেন, দলনেত্রীর সঙ্গে আমার বিধানসভায় কথা হয়েছে। নেত্রীকে বিজয়া দশমীর প্রণাম করতে কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখনও মমতাদির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমার শরীরের খবর নিয়েছেন। এবং জানিয়েছেন, শীঘ্রই তিনি বনগাঁতে ইছামতী নদী দেখতে আসবেন। যতদূর সম্ভব উত্তরবঙ্গে সফর শেষ করেই বনগাঁতে আসবেন নেত্রী। আমরা তাঁর অপেক্ষায় রয়েছি। রতনবাবু বলেন, আমরা তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছি।

২০০৬ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি সারা বাংলায় যে পরিবর্তন যাত্রার সূচনা হয়েছিল, তা শুরু হয়েছিল বনগাঁর মাটি থেকেই। ফলে বনগাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা আলাদা আন্তরিকতা রয়েছে। সেই টানে নেত্রী শুধু ভোটের প্রচারে নয়, বনগাঁর মানুষের আপদে বিপদে যে কোনও সময় ছুটে এসেছেন। বনগাঁর উন্নয়নে সবসময়ই ভাবেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পেট্রাপোল পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়েছে।

রতনবাবুর কথায়, ইছামতীর সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এই নদীকে ঘিরে বিকশিত হয়েছে শহর। ফলে ইছামতীকে কোনওভাবেই মরতে দেওয়া যাবে না। নেত্রী বনগাঁয় এলে তাঁর কাছে আমরা একটাই দাবি জানাব, সবার আগে ইছামতীর বুক থেকে জবরদখল মুক্ত করা হোক। নদীর পাশে ইটভাটা হোক, আপত্তি নেই। কিন্তু নদীর মধ্যে কেন ভাটা হবে? স্বরূপনগরে গেলে ইছামতীকে চেনা যায় না। খাল বলে মনে হয়। কিছু স্বার্থপর মানুষ ইছামতীকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।

নেত্রী এলে তাঁর হাতে গোটা রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে। বাম আমলে ইছামতী সংস্কারের নামে সরকারি টাকার অপচয় হয়েছে। নদী থেকে পলি তুলে তা নদীর পাড়েই রাখা হয়েছিল। ফলে বৃষ্টিতে ধুয়ে ফের সেই পলি ইছামতীতে গিয়ে মিশেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ইছামতী নদী সংস্কারে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছেন। এমনকী ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমাদের বিশ্বাস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ইছামতীর নামে জেলা ঘোষণা করেছেন, তখন এই নদীকে প্রাণবন্ত করে তুলতে তিনি যথাযথ উদ্যোগ নেবেন। আর সেকারণে তিনি বনগাঁয় ইছামতী দেখতে আসতে চাইছেন। তবে রাজ্য সরকারের একার পক্ষে এত বড় কাজ করার ক্ষমতা নেই। আমাদের প্রশ্ন, ইছামতী তো আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়।

তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে বসে আছে কেন? কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের যে টাকা বকেয়া আছে, সেটা অন্তত দিয়ে দিক। তাহলে রাজ্য বহু কাজ করতে পারে। উন্নয়নের টাকা নিয়ে বাংলার সঙ্গে বিজেপি সরকার যে বিমাত্তৃসুলভ আচরণ করছে, তা মোটেই কাম্য নয়।
