এক : ‘এটা শ্রাবণ মাস, বর্ষাকাল ৷ আমাদের প্রতিবারই ভেজায়। যদি মনে করেন এটা আশীর্বাদ-আশীর্বাদ, যদি মনে করেন শহীদদের চোখের জল-চোখের জল, এই জলটা একটু থাকে। কারই এই জল ছাড়া মানুষ বাঁচে না। জলের আর এক নাম জীবন। বৃষ্টি হচ্ছে ২১ জুলাই। এই বৃষ্টিই বলে দিচ্ছে ২৪-এ সৃষ্টি হবে। নতুন ইন্ডিয়ার জন্ম হবে। ইন্ডিয়ার নতুন করে সৃষ্টি হবে।’
দুই : ‘অভিনন্দন জানাই, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে বিপুল জয়ের জন্য। যখন সরকার অনুমতি দেবে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি দেবে, শান্তিপূর্ণভাবে বোর্ড গঠন করবেন।’
তিন : মণিপুর ইস্যুতে বলেন, ‘বাংলার তরফ থেকে, ভারতের তরফ থেকে বলতে চাই, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। বিজেপি বেটি বাচাও স্লোগান দিয়েছিল, কোথাও গেল বেটি বাঁচাও স্লোগান? আজ মেয়েদের জ্বালান হচ্ছে, আজ মণিপুর জ্বলছে, গোটৈ দেশ জ্বলছে। মহিলার ইজ্জত নিয়ে লুঠ করছে। যদি মহিলাদের ইজ্জত নেন, শুনে রাখুন, আসন্ন নির্বাচনে মহিলাতাই আপনাদের ভারত থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেলবে। আমার সঙ্গে অরবিন্দের (অরবিন্দ কেজরিওয়াল) কথা হয়েছে। আমরা ‘ইন্ডিয়া’ থেকে একটি দল মণিপুরে যাই। মুখ্যমন্ত্রীরদের দল। সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে তাঁদের সঙ্গে দেখা করি, কথা বলি। তাঁরাও চাইছেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে।’
চার : ‘১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ আমার ৫ বার পরপর প্রথম হয়েছিলাম। আমাদের পারফরম্যান্স এক নম্বরে। ৭ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। যারা কাজ করেছে, গরীব মানুষ, সেই টাকা তাদের টাকা দেওয়া হয়নি। আর ২৫ কোটি টাকা দিয়ে উপহার দিচ্ছে ভাজপা সরকার।’
পাঁচ : ‘আমরা বাংলার টাকায় নিজেদের ১০০ দিনের কর্মসূচি শুরু করার কথা ভাবছি। এর নাম দেব খেলা হবে। এতে কর্মসৃষ্টি হবে। বাংলার গরিব মানুষদের কথা ভেবে এই উদ্যোগ।’
ছয়: ‘জিএসটি তেকে টাকা নিয়ে যায়, সেই টাকা আমাদের ফেরত দেয়নি। যদি টাকা না দেয় তাহলে ২ অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিনের দিন সবাই মিলে দিল্লি যাব। যদি মাঝখানে আকটানো হয়ে, তাহলে সেখান তেকেই দিল্লিকে আওয়াজ যাবে। ৫ অগাস্ট অভিষেক (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) একট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে (বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি)। আমি বলব বুথ অনুয়ায়ী না করে ব্লক অনুযায়ী করতে। প্রতীকী ভাবে করবে, ১০০ মিটার দূরে করবে, যাতে বাড়ির লোকেদের যাতায়াতে অসুবিধা না হয়।’
সাতঃ ‘আমি খুশি ২৪-এর আগে ইন্ডিয়া নামে একটি জোট তৈরি করতে পেরেছি। আজ ভারতবর্ষে যে লড়াই হোক না কেন, সবটা ইন্ডিয়ার ব্যানারে হবে। ভারত জিতবে, এই ব্যানারে হবে। আমরা চেয়ারকে কেয়ার করি না। কোনও চেয়ার আমাদের চাই না। আমরা চাই, দেশ থেকে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে বিদায় নিক। কারণ বিজেপিকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। সব সীমা লঙ্ঘন করে দিয়েছে।’
আট : ‘নীতি আয়োগ বলছে পশ্চিমবাংলা দারিদ্র্যতা ১১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এক বছরে। আর ১০ বছরের হিসেবে ২৬ শতাংশ। কর্মসংস্থান ৪০ শতাংশ বাংলায় বেড়েছে। আর সারা ভারতে ৪৫ শতাংশ কমেছে।’
নয় : ‘বিজেপি টিভি চ্যানেলগুলোকে কিনে নিয়েছে। আজ ২১শে জুলাই হয়ে গেল, কাল পরশু থেকেই আবার শুরু করবে। হয় আমাকে জেলে ঢোকাবে, নয় আপনাকে জেলে ঢোকাবে। তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করার ক্ষমতা নেই, ভারতবর্ষকে শেষ করার ক্ষমতা নেই।’
দশ : ‘৭১ হাজার বুথে নির্বাচন হল। ৩টে জায়গায় গণ্ডগোল হল। একটা ভাঙড়, ওই হাঙররা গণ্ডগোল করেছে। একটা ডোমকলে, আমার জিতিনি, আমরা হেরেছি, গণ্ডগোল করে জিতেছে। একটা গণ্ডগোল হয়েছিল ইসলামপুর বা চোপড়ার দিকে। আর কোচবিহারে মারা গিয়েছে একজন। আর তৃণমূলের ১৮ জন খুন হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটা পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে দিচ্ছি। একটা করে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দিচ্ছি।’ ছবিগুলি তুলেছেন – দেবাশিস রায় ৷
অভিষেকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবেন শুভেন্দু কেন?
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপির ছোট-বড় সব নেতার বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আগামী ৫ অগস্ট বাংলায় বিজেপির জেলা থেকে ব্লক—ছোট, বড়, মেজ, সেজ সমস্ত নেতার বাড়ি ঘেরাও করবেন তৃণমূল কর্মীরা।’
এই কর্মসূচি ঘোষণার পরই অভিষেকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবেন বলে জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
একুশের মঞ্চ থেকে প্রথমে অভিষেক ৫ অগস্টের কর্মসূচির কথা বলেন। যদিও পরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কর্মসূচিতে কিছুটা বদল করেন। বাড়ি ঘেরাওয়ের পরিবর্তে বিজেপি নেতাদের বাড়ির ১০০ মিটার দূরে থাকতে বলেন তৃণমূল কর্মীদের। তারপরই এই কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি অভিষেককে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে এফআইআরের আবেদন নিয়ে আমরা আদালতে যাচ্ছি। আপনি আমার মৌলিক অধিকার আটকানোর চেষ্টা করছেন।’
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দিল্লি চলো-র ডাক দিয়েছেন অভিষেক। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, এই অভিযোগ তুলে আগেও তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে দিল্লি যাওয়ার কথা বলেছিলেন অভিষেক। এদিনের মঞ্চ থেকে একেবারের তারিখ বেঁধে দেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেন যে, ২ অক্টোবর দিল্লি গিয়ে আন্দোলন হবে। অভিষেকের কর্মসূচি নিয়ে শুভেন্দু বলেন, যদি এই কর্মসূচি হয় তবে দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদদের সংসদে ঢুকতে দেবেন না তিনি।
অভিষেক ৫ অগস্ট যে কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাতে সামান্য বদল করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, ‘অভিষেক যে প্রোগ্রামের কথা বলেছে, তাতে আমি বলব তা ব্লক ওয়াইজ করতে। বিজেপি নেতাদের বাড়ির একশ মিটার দূরে করবে। যাতে বাড়ির লোকেদের ঢুকতে বের হতে অসুবিধা না হয়।’ সেই নিয়ে শুভেন্দু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তা বলতে পারেন না মমতা। সবমিলিয়ে ফের নতুন করে বাংলার রাজনীতিতে পারদ চড়তে শুরু করেছে।