Mamata Banerjee – SSC‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কাজ চালাতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী , প্রশ্ন উঠছে কে যোগ্য , কে অযোগ্য

0
3

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে চাকরিহারা (এসএসসি 2016) শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বরাভয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “লাল, নীল, গেরুয়া কোনও রঙ দেখব না। আমাকে জেলে ভরলে ভরুক। আমি বেঁচে থাকতে কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি যাবে না”।

কিন্তু নেতাজি ইনডোরের সভা কক্ষে অনেক চাকরিহারার মনে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, কে যোগ্য আর কেই বা অযোগ্য? কীভাবেই বা তা নির্ধারণ করা হবে। বড় কথা হল, এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করে দেয়নি। রাজ্য সরকারকেও তা করতে দেয়নি। সরকার শীর্ষ আদালতের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইবে।

গত বৃহস্পতিবার ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, যোগ্য অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি বলেই পুরো প্যানেলটিকে বাতিল করা হল। তার আগে কলকাতা হাইকোর্টও এই মামলার রায়ে জানিয়েছিল, চাল ও কাঁকর আলাদা করা যাচ্ছে না। সুতরাং কৌতূহল ও প্রশ্ন, এ বার কীসের ভিত্তিতে কোনও চাকরিহারা প্রার্থী মনে করবেন যে তিনি যোগ্য!

এদিন নেতাজি ইনডোরে সভার প্রবেশপত্র ঘিরেও চাকরিপ্রার্থীদের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ ওয়েমার সিটের প্রতিলিপি নিয়ে এসে নিজেদেরকে যোগ্য বলে দাবি করতে থাকেন। কেউ কেউ আবার নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিভিন্ন শংসাপত্র নিয়ে এসেছিলেন। 

চাকরি বাতিল হওয়া প্রায় ২৬ হাজার জনের মধ্যে র‍্যাঙ্ক জাম্প করে বা বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষের পর ঘুর পথে নিয়োগ পেয়েছেন এমন প্রায় ৮ হাজার জনকে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এদের সুদ-সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সমস্যা তৈরি হয়েছে বাকি ১৭০০০ এর বেশি কিছু চাকরিহারাকে নিয়ে। কীসের ভিত্তিতে এর মধ্যে থেকে যোগ্য অযোগ্য বাছাই করা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। 

এদিনের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা কোর্টের কাছে ক্ল্যারিফিকেশন চাইব যাঁরা এতদিন কাজ করতেন, তাঁরা কী করবেন? নতুন পরীক্ষা নিতে বলেছেন, আগে জানতে চাই, যাঁরা শিক্ষক ছিলেন এতদিন, তাঁদের জন্য কী ব্যাখ্যা? স্কুল কে চালাবে?

খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই, তাঁর কথায়, “যদি না দেয় তাহলে মনে রাখবেন ‘যোগ্য’দের চাকরি নিশ্চিত করা দায়িত্ব আমার। যখন কেউ পথ হারায় তখন পথের মধ্যে পথ খুঁজে নিতে হয়। ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পথ খুঁজে নিতে হয়। এ, বি প্ল্যান বাতিল হলে সি-ডি-ই প্ল্যান রেডি রাখতে হয়।” এই কথা বলে, যোগ্য প্রার্থীদের ভলানটারিলি অর্থাৎ স্বেচ্ছায় শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যেতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

যা শুনে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছেন ঠিকই তবে তাদের মধ্যে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যোগ্য অযোগ্য বাছায়ের মাপকাঠি কী হবে? অর্থাৎ কারা নিজেদের যোগ্য ধরে নিয়ে স্কুলে পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাবেন!

অন্যদিকে,‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কাজে বহাল রাখার আবেদন, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই সুপ্রিম কোর্টে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ:

নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসের মাঝেই ফের ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির এজলাসে একটি আবেদন করেছে পর্ষদ। যাতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ আদালত একসঙ্গে ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করেছে। তাতে রাজ্যের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অভাবে পঠনপাঠন বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট নতুন নিয়োগ অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত (যেটি আগে হবে সেই অবধি) সংশ্লিষ্ট ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকাদের চাকরিতে বহাল রাখার অনুমোদন দিক। 

আদালত সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে মামলা ফাইল করা হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে মামলা মেনশন করে শুনানির জন্য উঠবে। নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারা প্রার্থীদের সামনেই সরকারের অবস্থান এ দিন স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেখানেই মমতা বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আমরা সমস্ত তথ্য দেব বিচার ব্যবস্থার কাছে। যাঁরা বাচ্চাদের পড়াতেন, স্কুলে যেতেন, যাঁরা এখনও স্কুলে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য আপনাদের কী ক্লারিফিকেশন আছে?… কারও চাকরি যাতে না যায় এটা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা দপ্তর যা করার করবে।’

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যাবেন কি না, স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন কী ভাবে হবে, সে বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দেশ দেয়নি স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এ দিন চাকরিপ্রার্থীদের তরফেও জানানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে ‘রিভিউ পিটিশন’ করা হোক। এর মাঝেই ‘যোগ্য’ চাকরিহারা প্রার্থীদের কাজে বহাল রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পর্ষদের।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, হয়তো সরকারের কিছু ভাবনা রয়েছে, তাই যোগ্য অযোগ্য প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এতটা নিশ্চিত হয়ে একথা বলেছেন। বিশেষ করে এটা স্পষ্ট যে, সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে নতুন আইনি লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ ফের সুপ্রিম কোর্টের শুনানি হবে এ নিয়ে। সেই মামলার চূড়ান্ত রায়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

Previous articleSSC–Mamata Banerjee যোগ্য কারও চাকরি যাবে না , সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনেই চাকবি দেব, মমতা, এ-বি-সি-ডি প্ল্যান স্পষ্ট করে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here