বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রী সরকারকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও গলায় শোনা গেল ‘ম্যান মেড বন্যা’র কথা।
দেশের সময় : বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রী সরকারকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও তাঁর গলায় শোনা গেল ‘ম্যান মেড বন্যা’র কথা।
দেখুন ভিডিও
ডিভিসির ছাড়া জলের জন্যই পুজোর মুখে বাংলার জেলায় জেলায় বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হল বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি নিজে মঙ্গলবার ডিভিসির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। ডিভিসি আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারতো। তবু পরিকল্পিতভাবে জল ছেড়ে বাংলাকে ডোবাল! এটা ম্যান মেড বন্যা।”
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাওড়া হয়ে হুগলিতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। পুরশুড়ায় যাওয়ার পথে একটি সেতুর ওপরে বহু বানভাসি মানুষকে দেখে গাড়ি থামান। কথা বলেন বন্যা কবলিত মানুষজনের সঙ্গে। এরপরই ডিভিসির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রী সরকারকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও তাঁর গলায় শোনা গেল ‘ম্যান মেড বন্যা’র কথা।
নবান্ন সূত্রের খবর, পুরশুড়া থেকে খানাকুল হয়ে এদিন মেদিনীপুরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতে মেদিনীপুরেই থাকবেন তিনি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি যাবেন বন্যা কবলিত ঘাটালে।
বুধবার হুগলির পুরশুড়া ব্লকে যান মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে পুরশুড়ার একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে প্লাবন দেখে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, কেন্দ্রের অসহযোগিতা এবং উদাসীনতায় বাংলায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আঙুল তোলেন ডিভিসি-র দিকেও। মমতা বলেন, ‘‘সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে ডিভিসি থেকে। আমি নিজে ডিভিসি-র সঙ্গে কথা বলেছি। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এত জল এর আগে ছাড়া হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যখন ৭০-৮০ শতাংশ জল ভরে যায়, তখন কেন জল ছাড়ে না ডিভিসি? কেন্দ্র ‘ড্রেনেজ’ করে না। নিজেদের রাজ্যগুলোকে বাঁচাচ্ছে। আর সবটা বাংলার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলা আর কত বঞ্চনা সহ্য করবে?’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে বাংলাকে ডুবিয়েছে।’’
রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি আসলে ‘ম্যান মেড’। এ কথা অনেক বার শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। বছর দুয়েক আগে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেও মমতা একই কথা বলেছেন। ২০০০ সালে রাজ্য জুড়ে বন্যার পর মমতা বলেছিলেন ‘ম্যান মেড’। ফারাক একটাই, তখন তিনি ছিলেন বিরোধী নেত্রী। আর এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমেও ‘ম্যান মেড’ বন্যার কথা বলেছিলেন মমতা।
অগস্টে প্লাবন পরিস্থিতি নিয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছিলেন, ‘‘এখনই আমি ঝাড়খণ্ডের মুখ্য়মন্ত্রী হেমন্ত সোরেনজির সঙ্গে কথা বললাম। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তেনুঘাট থেকে আচমকা বিপুল জল ছাড়া নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। এর জেরে বাংলা ইতিমধ্যেই প্লাবিত হতে শুরু করেছে। আমি তাঁকে বলেছি, ঝাড়খণ্ডের জলে বাংলা প্লাবিত হচ্ছে আর এটা ‘ম্যান মেড’। আমি এই ব্যাপারটি দয়া করে দেখার জন্য বলেছি। ’’
দামোদরের জলে প্লাবিত হুগলির বেশ কিছু এলাকা। পুরশুড়ার বেশ কিছু জায়গায় জলবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষজন। বেশ কিছু বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হুগলির তারকেশ্বরের একাধিক গ্রাম জলের তলায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলের তলায় হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির জেরে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল দামোদর। তার উপর দফায় দফায় জল ছেড়েছে ডিভিসি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। কিন্তু আবারও ডিভিসি-র ছাড়া জলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার জেরে বন্যাকবলিত তারকেশ্বর ব্লকের কেশবচক, সন্তোষপুর, তালপুর, চাপাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে জলের তলায় চলে গিয়েছে বহু বসতবাড়ি। দুর্গতদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে আনার ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও সহযোগিতা করেনি।
ডিভিসি-র ছাড়া জলে বুধবার থেকে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লক বন্যার কবলে পড়েছে। দু’টি ব্লকেরই বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত তলিয়ে গিয়েছে দামোদরের জলে। সরকারি সূত্রে খবর, সেখানেও যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারই তিনি চলে যাবেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। মেদিনীপুর শহরে রাতে থাকবেন। বৃহস্পতিবার ঘাটালের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেন মমতা।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাগুলিতে নজরদারির জন্য বিশেষ সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্লাবন পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের ১০ জেলায় ১০ জন সচিবকে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান আলাপন। এবার বন্যা পরিস্থিতি সরোজমিনে খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।