বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রচারসভা করতে কোচবিহারে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের রাসমেলার মাঠে তাঁর জনসভা ছিল। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া সমর্থনে প্রচার করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও কোচবিহারে সভা করেছেন তিনি। কয়েক দিন আগে ওই জেলায় সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার মমতার পাশাপাশি কোচবিহারে সভা রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফাতেই ভোটগ্রহণ হবে কোচবিহারে।
হীনা রায় দেশের সময় রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টারে তল্লাশি চালায় আয়কর। এই নিয়ে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। এবার কোচবিহারের সভা থেকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ভারতবর্ষের গণতন্ত্র নিয়ে স্বৈরাচারী খেলা করছেন। সকলের দুয়ারে ইডি, সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে। অভিষেকের একটা মিটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগে হেলিপ্যাডে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইনকাম ট্যাক্স বাবুদের। হেলিকপ্টারে নাকি সোনা আর টাকা নিয়ে আসছে! আমি বলি ওটা আমরা করি না, ওটা বিজেপি করে।’
মমতার কথায়, ‘আমরা এসব নিয়ে ঘুরি না, প্রয়োজন পড়ে না। আমরা একটা সিস্টেম রয়েছে। প্রয়োজন হলে মায়ের কাছে আঁচল পাতব। নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানাব।’ এদিকে সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ বেহালা ফ্লাইং ক্লাবের সামনে যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টারটি দাঁড়িয়েছিল সেই সময় নির্বাচন কমিশনের তিন জন প্রতিনিধি সেখানে যান। তাতে লেখা ছিল ‘ইলেকশন অন ডিউটি’। তাঁদের একজন জানান, তাঁদের সেখানে গিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এর থেকে বেশি তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি।
আগামী ১৯ তারিখ রাজ্যে প্রথম দফায় নির্বাচন। তার আগে কোচবিহারের জনসভা থেকে নাম না করে নিশীথ প্রামাণিককে তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখানে যিনি বিজেপি প্রার্থী, তিনি গুন্ডা, মাফিয়াদের সর্দার। আবার শীতলকুচির মতো গুলি চালিয়ে দেবে। আপনাদের বিপদে ফেলবে।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার রক্ষা করতে হলে বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও। খুব ভয়ানক পরিস্থিতি দেশে। দেশকে বেচে দিচ্ছে। আগামীদিনে আদিবাসীদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এই সরকার থাকলে দেশে আর নির্বাচন হবে না। একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা করছে বিজেপি। ৩ বছর ধরে বাংলাকে ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না।’
মমতার সংযোজন, ‘দুর্নীতির কথা বলছে। আজ আমি চ্যালেঞ্জ করে গেলাম ক্ষমতা থাকলে ঘোষণা করুন শ্বেতপত্র। তাতে বাংলায় কোথায় কটা দুর্নীতি হয়েছে সমস্ত জবাব দেওয়ার পর, কমিশনের রিপোর্ট, এজির রিপোর্ট আপনি ঘোষণা করুন। সঙ্গে সঙ্গে আপনি উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাটটাও ঘোষণা করুন। চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলা চোর নয়, বাংলা ডাকাত নয়। এটা আপনি এবং আপনার দল। একটা মিথ্যেবাদীর দল। গতবার বলল ১৫ লাখ টাকা করে দেব! কেউ পেয়েছেন সেই টাকা? কেউ কি ৫০ হাজার টাকাও পেয়েছেন?’
উত্তরবঙ্গের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের ঘাড়ের উপর বোঝা চাপিয়ে কোনও কাজ তিনি করবেন না বলে জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন নিজের মন্তব্যের প্রতিটি পরতে পরতে বিজেপি-কে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।